একসময় মঙ্গলগ্রহে পানি থাকলেও আজ তা পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমির থেকেও ১০০০ গুণ বেশি শুষ্ক। সেই মঙ্গলেই কি না ‘বরফের স্রোত’! অন্তত নাসার মঙ্গল অরবিটিং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সামনে এসেছে এমনই তথ্য।
এই স্যাটেলাইটে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা রয়েছে, যা মঙ্গল থেকে ছবি তুলে পাঠাতে সক্ষম হবে। গবেষকরা মনে করেন, যে এই ক্যামেরা এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী ক্যামেরা যা অন্য গ্রহের কাছাকাছি প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি এই স্যাটেলাইট মঙ্গলগ্রহের ১৮৪ মাইল উপর থেকে একটি ছবি তুলেছে। সেখানেই দেখা গিয়েছে আইস ফ্লো বা বরফের প্রবাহ।
এই প্রসঙ্গে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কিত ভূতত্ত্ববিদ এবং গবেষক মাইক মেলন জানিয়েছেন, মূলত মেরু অঞ্চলগুলিতেই এই বরফ জমার বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে। জানা গিয়েছে, এই বরফ ধীরে ধীরে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মূলত তৈরি হয়েছে বিভিন্ন গর্ত এবং ধ্বংসাবশেষের উপরের অংশে।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীদের একাংশের কথায়, মঙ্গলেও আগে ঋতু পরিবর্তন হত। একসময় বসবাসের যোগ্য ছিল এই লালগ্রহ। নাসার ‘কিউরিওসিটি›-র তোলা কিছু ছবি রীতিমতো মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে গবেষণার। এই ছবিতে কিছু ফাটল ধরা পড়েছিল।
গবেষকদের একাংশের বক্তব্য হয়তো এই ফাটলগুলিতে একসময় পানি থাকলেও থাকতে পারে। পরবর্তী সময়ে তা বাষ্প হয়ে উড়ে গেলেও যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আগে এই প্রক্রিয়া প্রায়শই দেখা যেত একসময়, মনে করছেন গবেষকরা।
২০১৮ সালে নাসা-র যে ‘ইনসাইট’ ল্যান্ডার মঙ্গলে গিয়েছিল, এত দিনে তার আয়ু ফুরোচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছে ইনসাইট।
নাসার বিজ্ঞানী ব্রুস ব্যানার্ট বলেছেন, ‘‘আমরা এখন জানি, মঙ্গলের উপরিতল কতটা পুরু। গভীরের কাঠামোটা কেমন।’’ এ ছাড়া মঙ্গলের বুকে ১৩১৮টি কম্পনের অস্তিত্ব ধরে ফেলে ইনসাইটনিশ্চিত জানিয়েছে যে, লাল গ্রহেও ভূমিকম্প হয়!
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে মঙ্গলে দু’টি জোরালো কম্পন টের পেয়েছিল ইনসাইট। ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত দু’টি গবেষণাপত্র বলছে, ওই কম্পনের কারণ ছিল উল্কাপাত। মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করা মার্স রিকনিস্যান্স অরবাইটারের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আছড়ে পড়া উল্কাটির আঘাতে মঙ্গলের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে বরফ।
বোল্ডারের আকারের সেই বরফ পড়ে রয়েছে উল্কার তৈরি করা গহ্বরের কিনারায়। মেরু অঞ্চল নয়, প্রায় মঙ্গলের বিষুবরেখার কাছে, এত গরম জায়গায় বরফ! উল্লসিত বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানে পানির চিন্তা মিটল।
এদিকে, স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুতগতিতে ঘুরছে মঙ্গল গ্রহ! নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সংগ্রহ করা উপাত্ত তেমনটিই বলছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে ইনসাইট ল্যান্ডারের অভিযান নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
অবসরে চলে যাওয়া মহাকাশযান ‘ইনসাইট’ ছিলো নানা প্রযুক্তিগত সরঞ্জামে সজ্জিত। এতে ছিল অ্যান্টেনা আর ‘রাইজ’ নামে রেডিও ট্রান্সপন্ডার। ইনসাইট টানা ৯০০ দিন মঙ্গলের আবর্তনের ওপর নজর রেখেছে।
বিজ্ঞানীদের দেখছেন, প্রতি বছর মঙ্গলের ঘূর্ণন গতি ৪ মিলিআর্কসেকেন্ড হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায়, এতে মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি বছরে এই পরিমাণ কমছে। এমনিতে মঙ্গলে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর চেয়ে ৪০ মিনিট বেশি।
ত্বরণের বৃদ্ধিটি এখানে নগণ্য। কেনো এটি ঘটছে তাও নিশ্চিত নন গবেষকরা। তবে তাদের ধারণা, মঙ্গলের মেরুতে বরফ জমা কিংবা বরফে ঢাকা কিছু জায়গা উন্মুক্ত হয়ে পড়ার ফলে এমনটি ঘটেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৭৫৫
আপনার মতামত জানানঃ