মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সামরিক সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বন্দি ছিলেন তিনি।
একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টেকেও ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। তারা দুজনেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে কারাগারে ছিলেন। সু চি ১৯টি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এর জন্য তার ৩৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।
তবে সু চি ও উইন মিন্টকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দেওয়া না হলেও তাদের শাস্তি কম করা হবে বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ৭ হাজারেরও বেশি বন্দিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট আদালতের সাজাপ্রাপ্ত আসামি অং সান সু চিকে ক্ষমা করেছেন রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।’
মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। সোমবার দেশটির ন্যাশনাল ডিফেন্স ও সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনডিএসসি) জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়।
এর ফলে জান্তা সরকার আগস্টে নির্বাচন দেয়ার অঙ্গীকার করলেও তাতে বিলম্ব ঘটবে বলেই বিশ্লেষকরা বলছেন। কারণ, দেশটির সংবিধান অনুযায়ী জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর কারনে নির্বাচনের তারিখও পিছিয়ে যাবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সে সময় সু চিসহ বেসামরিক সরকারের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর সু চির বিরুদ্ধে অন্তত ১৯টি অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিচার শুরু করে জান্তা সরকার।
তবে সামরিক আদালতে মামলার শুনানির সময় গণমাধ্যমকর্মী বা অন্য পর্যবেক্ষকদের কেউ উপস্থিত থাকতে পারেননি। ফলে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সু চির বিরুদ্ধে গোপন বিচারকে প্রতারণা বলে নিন্দা জানায়।
এরপরও দফায় দফায় রায় ঘোষণায় মোট ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত এ নেতাকে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহবন্দি থাকলেও অং সান সু চিকে গত বছর রাজধানীর একটি নির্জন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত দুই বছর তার প্রায় কোনো খবরই পাওয়া যায়নি। তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও সামরিক বাহিনী এ তথ্য অস্বীকার করে।
মিয়ানমারে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে। সেবার বিপুল ভোটে জয় পায় অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে, তিন মাস পরেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। জান্তার পক্ষ থেকে এনএলডির বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়।
সম্প্রতি নিবন্ধন না থাকার অভিযোগে সু চির দলকে রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে জান্তা নিয়ন্ত্রিত দেশটির নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু কেন হঠাৎ তার প্রতি কিছুটা নরম মনোভাব দেখাচ্ছে জান্তা প্রশাসন? আসলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা-সহ বহু দেশই মিয়ানমারে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ার অভিযোগ তুলে জান্তাকে কড়া বার্তা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ বহু শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের উপরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। আর্থিক বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চেয়েই জান্তা প্রশাসন সু চি’র প্রতি কিছুটা নরম মনোভাব দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এসডব্লিউএসএস২১৫০
আপনার মতামত জানানঃ