কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অবদান হিসেবে চ্যাটবট বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) যেভাবে আমাদের গণমাধ্যমের পরিসরে অনুপ্রবেশ করছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন কন্টেন্টের নিচে এ ধরনের ‘ডিসক্লেইমার’ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। আবার একইসঙ্গে এ জাতীয় ডিসক্লেইমারের সত্যতা নিয়েও জনমনে সন্দেহ থেকেই যাবে।
গত কয়েক বছর ধরে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি এবং লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল যেভাবে দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে, তাতে দিন দিন এটা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে লিখিত বা মৌখিক যোগাযোগের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি আসলেই একজন মানুষ নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি?
আর আমিই বা কিভাবে প্রমাণ করবো যে এই মুহূর্তে আপনি যা যা পড়ছেন সেগুলো একজন মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত সৃজনশীল চিন্তার ফলাফল? হয়তো মৌলিক কোনো ধারণা প্রকাশের মাধ্যমে কিংবা কোনোকিছু নতুন ও অভিনব উপায়ে পাঠক-দর্শকের কাছে বলার মাধ্যমে?
হয়তোবা একটা মজার জোক করা কিংবা বৈপরীত্য প্রকাশের মাধ্যমে? নাকি মানবিক সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে যা শুধুমাত্র একজন মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কতটা দ্রুত বিকাশ লাভ করছে এবং কত গভীরভাবে গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ করছে তা তখনই খোলামেলাভাবে প্রকাশ পেয়েছে যখন জার্মানির সবচেয়ে বড় ট্যাবলয়েড ‘বিল্ড’ ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা তাদের এক-তৃতীয়াংশ কর্মী ছাঁটাই করবে এবং তাদের কার্যাবলী মেশিনের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেবে।
এদিকে গত জানুয়ারিতে বাজফিডও সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা কুইজ তৈরির জন্য এআই ব্যবহার করবে এবং এরপর থেকে তারা এআই’র মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, বিশেষ করে এসইও-প্রাইমড ট্রাভেল গাইড নিয়ে।
জার্মান ট্যাবলয়েড ‘বিল্ড’-এর এডিটর-ইন-চীফ তার কর্মীদের কাছে একটি ইমেইলের মাধ্যমে বলেন, “এতদিন ধরে আমরা একজন এডিটর-ইন-চীফ, লেআউট শিল্পী, প্রুফরিডার, প্রকাশক এবং ফটো সম্পাদকের যেসব কার্যাবলির কথা শুনে এসেছি, এখ থেকে এগুলোর অস্তিত্ব আর থাকবে না।”
অন্যদিকে, বিল্ড-এর মালিক এবং অ্যাক্সেল স্প্রিংগার এর সিইও মাথিয়াস ডেফনার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ একটি চিঠিতে বলেন, “অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে আরও ভালোভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চা করার মতো ক্ষমতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির আছে।”
এর ফলে প্রাসঙ্গিকভাবেই একটি প্রশ্ন চলে আসে যে- আমি যেই পেশাটিকে ভালোবাসি, অর্থাৎ সাংবাদিকতার উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রভাব ফেলবে এবং সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভবিষ্যতকে কি রূপ দান করবে?
প্রথমত, আমাদের জানা উচিত যে ইতোমধ্যেই কয়েক বছর ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গণমাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, দুইভাবেই হয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গণমাধ্যমকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে তার একটি ইতিবাচক দিক হলো বিগ ডেটা জার্নালিজমের উত্থান, যা পানামা পেপারসের মতো বড় ধরনের তথ্য ফাঁস ডেটা প্রসেস করা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল কি হবে তা নির্ণয় করার মতো কাজও করতে সক্ষম।
শক্তিশালী অ্যালগরিদম ব্যতীত সাংবাদিকরা এই পর্বতসম ডেটার মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো খুঁজে বের করতে এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল প্যাটার্ন শনাক্ত করতে পারতো না এবং সেগুলো ব্যবহার করে ভালো আগ্রহোদ্দীপক ও ভালো স্টোরিও বলতে পারতো না।
মিডিয়া সংস্থাগুলোও কন্টেন্ট রেকমেন্ড করা, সাক্ষাতকারের প্রতিলিপি তৈরি, ভিডিওর সাবটাইটেল দেওয়া, দর্শকের আগ্রহ-চাহিদা এবং দর্শক এংগেজমেন্ট বিশ্লেষণের মতো কাজগুলো করতে এআই ব্যবহার করে।
সেইসঙ্গে নিজেদের এসইও র্যাংকিং বুস্ট করার উপায় বের করতেও এআই’র ব্যবহার করে থাকে মিডিয়া কোম্পানিগুলো। শেষোক্ত উদাহরণটি বুঝায় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরোক্ষভাবেও মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপকে প্রভাবিত করেছে, কারণ সার্চ ইঞ্জিন ও এবং সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো কন্টেন্টগুলোর গেটকিপার ও কিউরেটর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। তাদের অ্যালগরিদমের ফলে আয়ের প্রবাহ কিংবা মিডিয়া আউটলেটগুলোর আয়ের অভাবের ওপরেও অন্তর্নিহিত প্রভাব বজায় রেখেছে।
কিন্তু বর্তমানে উন্নতমানের লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল প্রকাশিত হওয়ায় এআইয়ের সেই আওতার বাইরে চলে যাওয়া এবং সাংবাদিকতার রন্ধ্রে প্রবেশ: অর্থাৎ এআইয়ের কন্টেন্ট তৈরি, এই দুটির সীমারেখায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা।
যেমন মানুষ হিসেবে ভাষাগত যোগাযোগ আমাদের পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে, তেমনই একজন সাংবাদিকের কাছেও গল্প বলা বা লেখা তার সাংবাদিক হওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য মনে হতে পারে।
আমি জানি, হিউম্যান স্টোরির প্রতি দুর্দমনীয় নেশা থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে আমি সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নিয়েছিলাম এবং এটাই আমাকে এই পেশায় ধরে রেখেছে। অনেক রকম ধারণা, শব্দ ও তথ্যের ভাণ্ডার থেকে একটা সুন্দর, আকর্ষণীয় গল্প তুলে আনার যে আনন্দ বা হতাশা, খুব কম জিনিসই একজন সাংবাদিককে সেই আনন্দ দিতে পারে।
এখান থেকেই বোঝা যায় যে কেন আমি কোনো টেক্সট এডিট করতে বা ড্রাফট তৈরির জন্য চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করি না; যদিও আমি চ্যাটবট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি আগেই।
কারণ নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে পেশাদারিত্বের দিক থেকে একটা আনন্দ পাওয়া যায়। তাছাড়া, এসব টুলস আমার কাজ সঠিকভাবে করতে পারবে কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।
একটা নিবন্ধ লেখা, একটা ভিডিও বানানো কিংবা রেডিও রিপোর্ট তৈরি শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া, কিন্তু এটা ভালোভাবে করতে পারলে অডিয়েন্স ও সাংবাদিক দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক। অনেকেই প্রত্যাশা করছেন যে, মেশিন লার্নিং উচ্চমানসম্পন্ন সাংবাদিকতার চাহিদা কমাবে না।
কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এআই নিয়ে প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে কলামিস্ট ট্রেসি কোয়ান লিখেছিলেন, “আমি জানিনা যে ভালো কাজ করার যোগ্য সাংবাদিকদের উপর এটা কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে।”
যদিও মানসম্মত, ভালোভাবে তৈরি কন্টেন্টের চাহিদা থাকবেই, কিন্তু কতজন বেশ ভালো অংকের টাকা দিয়ে সেই কন্টেন্ট গ্রহণ করবে তা একটি বড় প্রশ্ন। এমনকি সাংবাদিকরা যদি কন্টেন্ট তৈরি অব্যহত রাখতেও চায়, তাদের বসরা হয়তো রাজি হবে না, তারা হয়তো খরচ কমাতে চাইবে কিংবা ‘প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাইবে।’
যদিও এতে সন্দেহ নেই যে এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রস্থলে থাকবে মানুষ; কিন্তু কতজন থাকবে এবং তাদের ভূমিকা কি হবে তা একটি বড় প্রশ্ন আমাদের সামনে। নিউজরুমে এআই’র আগমনকে আপাতত সহজভাবে নেওয়া হচ্ছে এই ভেবে যে এটা সাংবাদিকদের কঠোর পরিশ্রম কমিয়ে আনছে; কিন্তু বাস্তবতা বেশ কঠিন।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হওয়ায় যেমন মিডিয়াতে অনেক প্রচ্ছন্ন কাজের চাপ দূর করেছে, তেমনি যেসব কাজ এখনো টিকে আছে সেগুলোও কমিয়ে ফেলতে পারে এটি। সেই দিন হয়তো খুব দূরে নেই যখন নিউজরুমের আলাপ-আলোচনা হয়ে যাবে সূদূর অতীত- এবং কর্মীহীন কারখানার মতো হয়ে যাবে।
নিয়মিত কন্টেন্টগুলোর জন্য মেশিন প্রযুক্তিই অবিরাম অনুলিপি তৈরি করতে থাকবে, যেগুলো হয়তো গুটিকয়েক সম্পাদক চেক করে দেবেন। আর যেহেতু এআইয়ের কোনো হাত-পা, কান নেই, তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বাইরে কাজ ও সাক্ষাৎকার নেওয়া চালিয়ে যেতেই হবে। তারা যেসব প্রাথমিক তথ্য পাঠাবে সেগুলো আংশিক বা পুরোপুরিই বট দ্বারা তৈরি কন্টেন্টে রূপান্তরিত হবে।
শীর্ষসারির মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য তাদের সেরা রিপোর্টার ও কলামিস্টদের ধরে রাখবে। এই তারকা রিপোর্টাররা একটি মেশিন-ড্রাইভেন মিডিয়া থেকে অন্যটির আলাদা বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সাহায্য করবেন এবং এমনভাবে কন্টেন্ট উপস্থাপন করবেন যেন তা দেখে মনে হয় অনেকটাই মানুষেরই তৈরি এবং সহজলভ্য; সেইসঙ্গে তারা ওই মিডিয়া আউটলেটটির ‘ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি’ ধরে রাখতেও সাহায্য করবেন। বলা হচ্ছে যে, আগামীতে এই খ্যাতনামা সাংবাদিকদের সঙ্গে এআই-সৃষ্ট তারকারাও যোগদান করবে কাজের ক্ষেত্রে।
কিন্তু জুনিয়র বা মাঝারি মানের সাংবাদিকদের জন্য টিকে থাকাটা অত সহজ হবে না। এদের অনেককে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হতে পারে অথবা যারা ছাড়বেন না, তাদেরকে হয়তো খুবই কম বেতনে কাজ করতে হবে। এদের অনেককেই মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে মেশিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে প্রচুর কাজ করতে হবে এবং নিজেরাও যান্ত্রিক হতে বাধ্য হবেন।
আপনার যদি মনে হয় আমি অনেক নিরাশাবাদীদের মতো কথা বলছি, তাহলে বলে রাখা ভাল যে গণমাধ্যমের ডিজিটালাইজেশন শুরুর পর থেকেই এই ট্রেন্ড পুরোদমে চলছে। ১৯৯০ সালে আমেরিকান সংবাদপত্রগুলো প্রায় অর্ধমিলিয়ন মানুষকে নিয়োগ দিয়েছিল; কিন্তু ২০১৬ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা কমে ১ লাখ ৮৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে- অর্থাৎ ৬০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
এছাড়া, একেকজন সাংবাদিক কি পরিমাণ কাজ করবেন সেটিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আগে যেসব কাজ মানুষ করতো, এইআই এখন সেই কাজগুলো দখল করে নেওয়ায় এই ট্রেন্ড আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কর্ম ও চাকরির নিরাপত্তার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলার পাশাপাশি, গণমাধ্যমে এআই-এর আধিপত্য বিস্তারের সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাবও রয়েছে। চ্যাটবট যে শুধু প্রচুর শক্তির অপচয় ঘটায় তা-ই নয়, এটা বিভ্রান্তিকরও বটে। চ্যাটবট কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে সেটা স্বীকার করার বদলে তারা নিজে থেকে বানিয়ে বানিয়ে উত্তর দিয়ে দেয়।
চ্যাটজিপিটির নির্ভুলতা পরীক্ষার জন্য আমি এটিকে বলেছিলাম আমি খুব ভালো জানি এমন একটা বিষয়ে কয়েক লাইন লিখতে। তারপর বলেছিলাম আমার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখতে এবং বলে দিয়েছিলাম: ‘শুধুমাত্র যাচাইযোগ্য তথ্য ব্যবহার করবে, যেসব সূত্র থেকে তথ্য নেবে সেসব সূত্র উল্লেখ করবে।’
এরপর দেখা গেল চ্যাটজিপিটি আমার যে জীবনী লিখেছে তা ভুলে ভরা। আমার জন্মস্থান, আমার পড়াশোনা, আমার কাজ সবকিছু নিয়েই ভুল তথ্য দিয়েছে সে। আরও অবাক হয়ে দেখলাম, যেসব সূত্র এটি উল্লেখ করেছে সেগুলো দেখে মনে হবে সত্যি হতেও পারে; অথচ বাস্তব জগতে এসব তথ্যসূত্রের কোনো অস্তিত্বই নেই।
যতদিন না পর্যন্ত এআইয়ের এইসব ভুল সংশোধন বা সীমাবদ্ধতা দূর করা না যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সাংবাদিকতায় লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
‘পারসোনালাইজড কন্টেন্ট’ তৈরি ও সমন্বয় প্রক্রিয়ায় এআই ব্যবহার করলে জগতের প্রতি একজন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ হয়ে যেতে পারে। “সংবাদ গ্রহণ যদি পারসোনালাইজড হয়ে যায় তাহলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈচিত্র্য কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং বিপরীত চিন্তাধারা সম্পর্কে সে কম জানতে পারে, ফলে ‘ইকো চেম্বার’ তৈরি হতে পারে।
তাছাড়া, এসব এআই সিস্টেমের ওপর অতি-নির্ভরতা আমাদের এমন একটা পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারে যেখানে আমরা হয়তো বুঝতেও পারবো না যে এটা আমাদের বিভ্রান্ত করছে কিনা। এআই পক্ষপাতীত্ব ধরে রাখতে পারে, এমনকি নতুন করে তৈরিও করতে পারে। আর আমরা যদি প্রশ্ন না তুলি এবং সবকিছু বিশ্লেষণ করে না দেখি, তাহলে আমাদের অগোচরেই এটা ঘটে যেতে পারে।
এছাড়াও, চরমপন্থী থেকে শুরু করে কর্তৃত্ববাদী সরকার এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেও প্রোপাগান্ডা বা ভুল তথ্য ছড়ানোর যে সম্ভাব্য ক্ষমতা আছে এআই-এর ,তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি ডিপফেইক প্রযুক্তি এতদূর চলে গিয়েছে যে এটি ‘কমন রিয়েলিটি’ বা সাধারণত যাকে বাস্তব বলে জানি, সেই ধারণাকেই বদলে দিতে পারে অথবা নষ্টই করে ফেলতে পারে।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মানেই যে শুধু নেতিবাচকতা আর নৈরাশ্য, তাও নয়। আগের অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তির মতো এআইও বৈষম্য সৃষ্টির পাশাপাশি আবার এক ধরনের গণতান্ত্রিকতাও বয়ে আনতে পারে। খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমে ছোটখাট উদ্যোক্তাদের সীমিত সম্পদের মধ্যে কাজ করার এবং এখান থেকেই ভালো ফলাফল ও লাভ বের করে আনার সুযোগ তৈরি করতে পারে এআই।
যেসব মিডিয়া সংস্থা এআইকে মানুষের জায়গা দখল করছে এমন কিছুর পরিবর্তে পরিপূরক কিছু ভাবেন, তারা অনুসন্ধানী ও ডকুমেন্টারি সাংবাদিকতার দুর্বল ক্ষেত্রগুলোকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন। যদি কর্মীর সংখ্যা আগের মতোই রাখা হয় বা বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে এটা মানুষকে কিছু কাজের চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
কিন্তু আমরা যদি মিডিয়া এবং অন্যান্য ডোমেইনে এআই থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে চাই, তাহলে শুধুমাত্র লাভের জন্য পরিচালিত টেক কোম্পানিগুলো দিয়ে সেটা চলবে না। নৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রতিটি দিক শুরুতেই বিবেচনা করতে হবে। আর সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিচার করলে, ভবিষ্যতে সমাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভূমিকা কি হবে- সেই সিদ্ধান্ত কিন্তু আমাদের সবার মিলেই নেওয়া উচিত, কারণ এআই’র প্রভাব আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই পড়বে।
এসডব্লিউএসএস/২১১০
আপনার মতামত জানানঃ