গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তিনি।
৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।এবারের নির্বাচনে মোট মেয়র প্রার্থী ছিলেন আটজন।
এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। মূলত গাজীপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় এবং মার্কিন নতুন ভিসা নীতির প্রভাব থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে এ উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গতকাল খাগড়াছড়ি ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খাগড়াছড়িতে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। খাগড়াছড়ি কলেজ সড়কে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘটিত এ হামলার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ তা অস্বীকার করে বলেছে, বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রথমে হামলা করে।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আফছার অভিযোগ করে বলেছেন, ‘পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে খাগড়াছড়ি আসছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। তার গাড়িবহর শহরে আসার পথে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে তাদের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পূর্বনির্ধারিত শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপির গাড়িবহর থেকে কার্যালয়ের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত শুরু করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার নাইমুল হক বলেন, ‘বিএনপির গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আহত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীসহ অন্তত পঞ্চাশ নেতাকর্মী। কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান, সমাবেশ শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এদিকে এসব সংঘর্ষের এ ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু অভিযোগ করে বলেছেন, কেরানীগঞ্জের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সমাবেশ শুরুর আগে বিএনপির জমায়েতের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল মারতে থাকে। এতে নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘হামলায় নিপুণ রায় চৌধুরীর মাথা ফেটে গেছে। মাথায় ছয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। তাকে ঢাকার কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
বিএনপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন। তিনি বলেন, ‘নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের ২০-২২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, গত ছয়দিনে সারা দেশে বিএনপির ৬৫০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে ১৪৮টি। এসব মামলায় প্রায় ৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ঘরোয়া কর্মসূচি থেকে বের হয়ে এখন নিয়মিত রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশের নামে নিয়মিত মাঠে থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এতদিন শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু চললেও গাজীপুরের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় এবং মার্কিন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতির মাঠ।
তারা বলছেন, সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য আগামী নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছতে হবে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে। অন্যথায় পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হবে। এসব সংঘাত একসময় প্রাণহানিতেও রূপ নিতে পারে—এমন আশঙ্কাও করছেন তারা।
এসডব্লিউএসএস/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ