২০০৯ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো উটের ক্লোনিং করেন নিসান আহমাদ ওয়ানি। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ের রিপ্রোডাক্টিভ বায়োটেকনোলজি সেন্টারের বৈজ্ঞানিক পরিচালক। ক্লোনিং পদ্ধতি দুবাইয়ে এখন এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, ওয়ানিকে আজকাল এ কাজটাই নয়টা-পাঁচটার চাকরির মতো করতে হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে দুবাইয়ে উটের ক্লোনিং নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে সিএনএন।
ওয়ানি ও তার গবেষক দল এ সেন্টারে ক্লোনিং নিয়ে গবেষণা করেন, নতুন নতুন ক্লোনিং প্রযুক্তির বিকাশ ঘটান এবং কোষব্যাংকের ব্যবস্থাপনা করেন। এ সেন্টারে মহিষ ও ভেড়ার ক্লোনও করা হয়, তবে এখানে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় উটের ক্লোনিংয়ের ওপর। প্রতিবছর এ সেন্টারে ক্লোনিং পদ্ধতিতে কয়েক ডজন ড্রোমেড্যারি উটের বাচ্চা তৈরি করা হয়।
কেন করা হয় ক্লোনিং?
উপসাগরীয় দেশগুলোতে উটের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা একটি জনপ্রিয় বিষয়। এ ধরনের কোনো কোনো উৎসবে পুরস্কার থাকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। উটের শরীরে সিলিকন ও ফিলার প্রবেশ করানো, রাবারের ব্যান্ড দিয়ে প্রাণীটির শরীর ফোলানোর মতো নিষিদ্ধ কৌশল ব্যবহার করায় এসব প্রতিযোগিতা থেকে অনেক সময় উটের মালিক বহিষ্কৃতও হয়েছেন। কিন্তু ক্লোন পদ্ধতিতে তৈরি করা উট আবার এসব প্রতিযোগিতায় দিব্যি বৈধ।
যদিও রিপ্রোডাক্টিভ বায়োটেকনোলজি সেন্টার এর দাম প্রকাশ করতে অপারগতা জানিয়েছে, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, কেউ তার পছন্দের উটের ক্লোন করতে চাইলে তাকে প্রায় দুই লাখ দিরহাম বা ৫০ হাজার ডলারের বেশি খরচ করতে হবে।
সুন্দরী উট ক্লোন করার পাশাপাশি ওয়ানি ও তার দল উটের বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ উটগুলোর ক্লোনিংও করে থাকেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এ ধরনের উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় আজকাল জকি হিসেবে রোবট ব্যবহার করা হয়। এসব প্রতিযোগিতায় জয়ী উটের মালিক পুরস্কার হিসেবে হাজার হাজার ডলার পান।
এছাড়া ওয়ানির দল জিনগতভাবে পরিবর্তিত উটের ক্লোনও করে থাকেন। দুধে প্রোটিন উৎপন্ন করার জন্য এ ধরনের উটের জিনে পরিবর্তন আনা হয়। এ দুধ ঔষধ তৈরির খাতে ব্যবহার করা হয়। পোষা উট মারা গেলে মালিককে ওই মৃত উটের রেপ্লিকাও তৈরি করে দিতে পারেন ওয়ানি।
এছাড়া বর্তমানে ওয়ানি ও তার দল চাচ্ছেন বিপন্ন প্রজাতিগুলোতে সহায়তার জন্য ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। দুই কুঁজবিশিষ্ট বুনো ব্যাকট্রিয়ান উট পৃথিবীর বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণী। পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া, গৃহপালিত উটের সঙ্গে ক্রস প্রজনন ইত্যাদি কারণে বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে ব্যাকট্রিয়ান উট। এগুলো সংরক্ষণে সহায়তা করতে ওয়ানি ও তার দল নতুন একটি কৌশল নিয়ে কাজ করছেন।
এ পদ্ধতিতে তারা উটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত এমন একটি গৃহপালিত প্রজাতিকে ডিম্বাণু দাতা ও সারোগেট মা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরে সারোগেট মা ক্লোন করা ভ্রুণ থেকে বাচ্চার জন্ম দেয়।
২০১৭ সালে রিপ্রোডাক্টিভ বায়োটেকনোলজি সেন্টারে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাকট্রিয়ান উটের প্রথম ক্লোন করা বাচ্চার জন্ম দেওয়া হয়। তখন ভ্রূণকে একটি ড্রোমেড্যারি উটের গর্ভে স্থাপন করা হয়েছিল।
ভবিষ্যতে ক্লোনিংয়ের এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যসব মহাবিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণ এবং এমনকি বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনতে সহায়তার ব্যাপারেও আশাবাদী ওয়ানি।
কীভাবে করা হয় ক্লোনিং?
যে উটের ক্লোন করা হবে, তার ‘সোমাটিক’ কোষ থেকে ডিএনএ ব্যবহার করে উটের ক্লোনিং করেন ওয়ানি। এ দাতা কোষগুলোর নিউক্লিয়াসকে একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে সংযুক্ত করে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে সক্রিয় করা হয়।
‘সোমাটিক কোষের এ ডিএনএ যেকোনো ভ্রূণের ডিএনএ’র মতো আচরণ শুরু করে,’ সিএনএনকে বলেন ওয়ানি। ‘একবার সক্রিয় হলে, টানা সাত থেকে আটদিন ধরে এগুলোকে গবেষণাগারে কালচার করা হয়। এরপর সারোগেট মা উটের গর্ভাশয়ে এটিকে স্থাপন করা হয়।
‘এভাবে যে বাচ্চা উটের জন্ম হয়, তারমধ্যে দাতা উটের সব জিন থাকে।’
ওয়ানির মতে এ প্রক্রিয়াটি খুবই সুকৌশলে করা হয়। এটির কোনো সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তাও নেই। ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে গর্ভাবস্থা তৈরি করার সাফল্যের হার কেবল ১০ শতাংশ। অন্যদিকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে উটের গর্ভধারণের হার ৬০ শতাংশ।
এসডব্লিউএসএস/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ