ফেনীতে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় লিঙ্গের এক শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেনারেল হসপিটালের লেবার ওয়ার্ডে এই শিশুটি জন্মগ্রহণ করেন। এই শিশুর জন্ম দেন ছাগলনাইয়া উপজেলার মটুয়া এলাকার এক নারী।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শিশুর মা তাসলিমা আক্তার এর প্রসব ব্যথা উঠলে তার শশু- শাশুড়ি সকাল ৭টার দিকে ফেনী সদর হসপিটালে নিয়ে আসেন। এ সময় প্রসব ব্যথা তীব্র হলে হসপিটালের নার্সেরা তাসলিমার স্বাভাবিকভাবে ডেলিভারি করান।
ডেলিভারির পরবর্তীতে দেখেন শিশুটি পুরুষ ও স্ত্রী উভয় লিঙ্গের। খবরটি হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন শিশুটিকে দেখতে ভিড় জমায়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা বেগম জানান, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলার এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হলে নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নেয়া হয়। ৮টা ১৫মিনিটে সন্তান ভূমিষ্ট হলে ওই নবজাতকের মধ্যে পুরুষ-স্ত্রী উভয় লিঙ্গের অর্গান দেখা যায়।
উভয় লিঙ্গের শিশুর জন্মের পর দায়িত্বরত সকলের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এটি আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা বলে জানান তিনি।
মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট সরোয়ার হোসেন জানান, শিশুটি পুরুষ-স্ত্রী উভয় লিঙ্গের অর্গান নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছে৷ বর্তমানে মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ আছেন৷ উভয় লিঙ্গের শিশুটির জটিল সার্জারীর প্রয়োজনে ঢাকা বা চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হতে পারে।
ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতক ও মা সুস্থ আছেন।’ তবে বিষয়টি নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
শিশুর বাবা মহিউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল প্রসব বেদনা উঠলে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন এ অবস্থায় কী করব বুঝতে পারছি না। এই শিশুর চিকিৎসা করানো আমার পক্ষে অসম্ভব।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘এটি সাধারণ জিনগত ত্রুটিজনিত সমস্যা। আমাদের সমাজে এ ধরনের মানুষ রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে “ট্রু হারমাফ্রোডিটিজম” বলা হয়।’
ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘জন্মের পরই এ ধরনের শিশুর চিকিৎসা করা সম্ভব। শিশু হরমন বিভাগ এবং শিশু সার্জারি বিভাগ যৌথভাবে এসব শিশুর চিকিৎসা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ যে হরমনের প্রভাব বেশি থাকে, শিশুটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সেই দিকে পরিবর্তন করা যায়।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘এদের প্রজনন ক্ষমতা খুবই কম থাকে, বা ক্ষেত্রবিশেষ থাকে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক বিকাশজিনত ত্রুটি দেখা যায়। ক্ষেত্রবিশেষ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীও হয়ে থাকে। যত কম বয়সে চিকিৎসা করা যায় এসব শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা ততই বেশি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বড় মেডিকেল কলেজে এসব শিশুর চিকিৎসা করা হয় বলে জানান এই চিকিৎসক।
এসডব্লিউএসএস/১১৩৭
আপনার মতামত জানানঃ