এ এক অদ্ভুত ক্লাব। নাম তার ‘ক্লাব অফ টোয়েন্টি সেভেন’। নামী সব তারকারা এই ক্লাবের সদস্য। তবু শখ করে এই ক্লাবে নাম লেখাতে চান না কেউই।
এ ক্লাবের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তবে সেই খ্যাতি মোটেই সুখ্যাতি নয়। বরং বহু অলৌকিক কাণ্ডকারখানা জড়িয়ে রয়েছে এই ক্লাবের সঙ্গে।
এ ক্লাবের অবশ্য কোনও ক্লাব হাউস নেই। নেই সদস্য হওয়ার কোনও বিনিময়মূল্য। তার পরও এই ক্লাবে নাম লেখানো যায় না। কারণ এই ক্লাবের অস্তিত্ব বাস্তবে নয় রয়েছে এক অধিবাস্তব স্তরে।
বিখ্যাত সব সঙ্গীতশিল্পী এ ক্লাবের সদস্য। তালিকায় রয়েছেন জিম মরিসন, ব্রায়ান জোন্স, রবার্ট জনসন, কার্ট কোবেইনের মতো ব্যক্তিত্ব।
কাকতালীয় ভাবে এঁরা প্রত্যেকেই মারা যান ২৭ বছর বয়সে। এই ক্লাব কুখ্যাত ওই বয়সের জন্যই। এ ক্লাবের সদস্যরা প্রত্যেকেই অকালে মারা গিয়েছেন। এবং প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে ২৭ বছরেই।
প্রায় প্রত্যেকের মৃত্যু অস্বাভাবিক। কেউ মারা গিয়েছেন অতিরিক্ত মাদক সেবনের জন্য, কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কেউ আবার আত্মঘাতী হয়েছেন। গাড়ি দুর্ঘটনাতেও মারা গিয়েছেন কেউ।
অবশ্য এদের কেউ কেউ ক্যানসারের মতো রোগেও আক্রান্ত হয়েছেন। বিষক্রিয়াতেও মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের।
১৯৬৯ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বহু শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, তারকা এই ২৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তাদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নয় নয় করেও ৬০-এর বেশিই। এঁরাই ক্লাব অব ২৭-এর সদস্য।
কিন্তু হঠাৎ ২৭ বছর বয়সেই কেন মৃত্যু এই তারকাদের? কারণ খুঁজতে গিয়ে এক অদ্ভুত তত্ত্ব দিয়েছিলেন সেই সময়ের কিছু বিশেষজ্ঞ। তারা দাবি করেছিলেন, এই শিল্পীরা শয়তানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সে চুক্তির যেমন ভাল দিক রয়েছে, তেমনই রয়েছে খারাপ দিকও।
সেই চুক্তি অনুযায়ী নাকি শিল্পী তার কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা পাবেন কিন্তু বদলে তাদের চড়া দাম দিতে হবে।
মূল্যটি যে বেশ চড়া সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কোনও। কারণ সেই বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তত্ত্ব বলছে, শয়তানকে নিজেদের আত্মা বিক্রি করতেন এই শিল্পীরা। তার বদলে পাওয়া যেত কাঙ্ক্ষিত খ্যাতি।
এর কোনও প্রামাণ্য ভিত্তি নেই যদিও। থাকার কথাও নয়। তবে রক ব্যান্ড নির্বানার গিটারিস্ট কার্ট কোবেইনের জীবনীকার লিখেছিলেন, ওই শিল্পীর মা কিছুটা এই অলৌকিক দাবি মেনেও নিয়েছিলেন।
কার্টের মৃত্যুর পর এক সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমার মনেই হয়েছিল ও ওই বোকা ক্লাবটায় নাম লেখাচ্ছে। আর ঠিক সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।’’
কার্টের ব্যাপারে তার মায়ের এই অদ্ভুত দাবির সূত্র অবশ্য লুকিয়ে রয়েছে ২৭ ক্লাবের আর এক সদস্যের জীবনকাহিনিতে।
২৭ গোষ্ঠীর প্রথম সদস্য বলা যায় তাকেই। নাম রবার্ট জনসন। রবার্ট আমেরিকার ব্লু ঘরানার সঙ্গীতের এক অন্যতম শিল্পী। যাঁর কাজ জীবদ্দশায় যত না খ্যাতি পেয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি খ্যাতি পেয়েছে তার মৃত্যুর পর।
রবার্টকে আমেরিকার ডেল্টা ব্লু ঘরানার জনক বলা হয়। তবে রবার্ট তার খ্যাতি উপভোগ করতে পেরেছিলেন মাত্র সাত মাস। তার পরে রহস্যজনক ভাবে মারা যান। আজ পর্যন্ত তার মৃত্যুর সঠিক খবর জন্য যায়নি।
রবার্টের জীবনে খ্যাতি এসেছিল আচমকাই। তার আগে পর্যন্ত তার শিল্পের কদর ছিল না তেমন। রবার্টকে নিয়ে যে কাহিনি লোকের মুখে মুখে ফেরে তার মূল বক্তব্য, এই রবার্টই প্রথম নিজের আত্মার বেসাতি করেছিলেন শয়তানের সঙ্গে।
মিসিসিপির বাসিন্দা ছিলেন রবার্ট। সেই সময়ে অনেকেই বলেছিলেন, তারা রবার্টকে প্রতি রাতে গিটার সঙ্গে নিয়ে এক নির্জন এলাকায় যেতে দেখতেন।
এমনকি, সেই নির্জন স্থানে রবার্টের সঙ্গে এক দীর্ঘদেহীকেও প্রায়ই দেখা যেত বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি তিনিই শয়তান। তার সঙ্গে চুক্তির ফলেই নাকি ডেল্টা ব্লু সঙ্গীত সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন রবার্ট।
পরবর্তী কালে ক্লাব অব টোয়েন্টি সেভেনের বাকি সদস্যরাও একই কাজ করেন বলে বিশ্বাসীদের ধারণা। যদিও এই সব ধারণা এবং চলতি কাহিনির কোনও প্রমাণ বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
২৭ বছর বয়সে এই ধরনের শিল্পী বিশেষত সঙ্গীতশিল্পীদের মৃত্যুর নেপথ্যে একটি বৈজ্ঞানিক যুক্তিও রয়েছে। সেই ব্যাখ্যা বলছে, এই বয়সে অধিকাংশ শিল্পীই বাঁধনছাড়া জীবনযাপন করেন। ২৭ বছরে মৃত্যুর কারণ হতে পারে সেটাও।
সূত্র: আনন্দবাজার
এসডব্লিউএসএস/২০১৩
আপনার মতামত জানানঃ