ভারত থেকে নতুন করে তিন লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আমদানি করা হবে। বাকি এক লাখ টন আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হবে। ভারতের চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমদানিপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তবে একই মানের চাল কেনায় ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতি টনে দামের পার্থক্য প্রায় ৪০ ডলার। ভারতের একাধিক গণমাধ্যম সরকারি-বেসরকারি চাল কোম্পানির মধ্যে দামের ওই পার্থক্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একই মানের চাল ভারতের বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতি টন যথাক্রমে ৩৯৩ ও ৩৯৭ ডলার করে সরবরাহ করছে। কিন্তু জিটুজি পর্যায়ে ভারতের দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ৪৩৩ ডলার ৬০ সেন্ট ও ৪৩৬ ডলার ৫০ সেন্ট করে দাম ধরেছে।
এরই মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভাবিষয়ক ক্রয় কমিটি ওই চাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ভারতের দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক লাখ টন করে এবং দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন করে চাল কেনা হবে।
জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি দেশে চালের দাম ওঠানামা করে। সরকারি পর্যায়ে চাল কেনার আলোচনা শুরু হয় গত অক্টোবরে। আলোচনা চূড়ান্ত হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। ওই সময়ের রপ্তানি মূল্য অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থার সঙ্গে চাল আমদানির দরদাম ঠিক হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র দেওয়া হয়েছে গত ডিসেম্বরে। তখন চালের দাম কমে গেছে। ফলে কম দামে আমরা চাল কিনতে পারছি।’
বেশি নিচ্ছে ৬৬ কোটি রূপি
আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারতের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরে বাংলাদেশকে ৫০ হাজার টন করে চাল সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি অ্যাগ্রো-ক্রপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ভারতের বাগাদিয়া।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দু গ্রুপের পত্রিকা বিজনেস লাইন–এ গত ২১ ডিসেম্বর চাল আমদানির ক্ষেত্রে দামের ওই পার্থক্য নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশি দামে বাংলাদেশে চাল রপ্তানির জন্য নির্বাচিত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সরকারি সমবায় সংস্থাগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় প্রতি লাখ টন চালে ৩৩ কোটি রুপি করে বাড়তি দাম পাচ্ছে। এ হিসাবে দুই লাখ টনে সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি ৬৬ কোটি রুপি বেশি নিচ্ছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে কম দামে বিশ্ববাজারে চাল দিচ্ছে। বিশ্ববাজারে অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার চালের দাম তুলনামূলক বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
জানতে চাইলে সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী বলেন, দেশে ডলার–সংকটের এই সময়ে সবচেয়ে কম দামে যেখান থেকে চাল পাওয়া যাবে, সেখান থেকে সরকারের চাল কেনা উচিত। চালের দাম কমতে থাকলে কিছুটা অপেক্ষা করে তারপর চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ভারত বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি চাল বিক্রি করবে। এর মধ্যে শুধু চীন ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল কিনবে। এর বাইরে ফিলিপাইন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ভারত থেকে চাল কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি খাদ্যগুদামে প্রায় ১৪ লাখ টন চাল মজুত আছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে এ সময়ে প্রতি মাসে দুই লাখ টন করে চাল বণ্টন করা হয়ে থাকে। দেশে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা তিন লাখ টন করা হয়েছে। তাই সরকার অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি বিদেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/২২১০
আপনার মতামত জানানঃ