কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট ব্যাপক কর্মসংস্থানের ঘাটতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে কর্মদিবস কমিয়ে চার দিনে আনার প্রস্তাবনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন জোটের একটি অংশ। বিষয়টি নিয়ে সরকারি জোটে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের বিভক্তি। ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ স্পেনে ক্ষমতাসীন বামপন্থী জোটের একাংশ তথা পোডেমস দলটি কর্মদিবস হ্রাসের বিষয়টি নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
পোডেমস দলে নেতা এবং উপপ্রধানমন্ত্রী পাবলো ইগলেসিয়াস এ বছরে ডিসেম্বরের শুরুতে বলেন, কর্মদিবস কমিয়ে আনার ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মূল্যায়ন পাওয়া গেছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই পদক্ষেপ সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
পোডেমস দলের আরেক নেতা ও শ্রমমন্ত্রী ইওলান্দা দিয়াজ এক টুইটে বলেন, “কর্মঘণ্টা নিয়ে বৈশ্বিক আইন ও নীতিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি নতুন ধারণা দরকার।“
স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিয়ন কনফেডারেশন ইউজিটি (UGT) দীর্ঘদিন ধরেই সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা চারদিনে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইউজিটির নেতা পেপে আলভারেজ বলেন, “এর মাধ্যমে আমরা প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারব।“ এছাড়া স্পেনের বৃহত্তম ইউনিয়ন কমিশনস ওব্রেরাসও সাপ্তাহিক চারদিনের কাজকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে কর্মঘণ্টা হ্রাসের পাশাপাশি নূন্যতম মজুরি এবং শ্রমনীতি সংস্কারকেও অগ্রাধিকার দেয়া দরকার বলে সংগঠনটি অভিমত ব্যক্ত করেছে।
এ মাসের শুরুতে ইউনিলিভারের নিউজিল্যান্ড শাখায় কর্মচারীদের সাপ্তাহিক কর্মদিবস চারদিনে কমিয়ে আনার পরে এই প্রস্তাবনা আসে। স্পেন ছাড়াও জার্মানির একটি প্রভাবশালী কর্মী সংগঠন ‘আইজি মেটাল’ও কর্মদিবস হ্রাসের ধারণাটি নিয়ে কাজ করছে। তবে ১৯৭০-এর দশকে গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর থেকে স্পেনের প্রথম জোট সরকারের প্রভাবশালী দল সমাজতান্ত্রিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি বাধার মুখে পড়েছে।
বাজেট মন্ত্রী মারিয়া যিশু মন্টেরো বলেন, “সরকারকে তার প্রধান অগ্রাধিকার থেকে মনোযোগ হারাতে দেয়া হবে না। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো মহামারীর আগের প্রবৃদ্ধির হার ফিরিয়ে আনা।“
স্পেনের উৎপাদনশীলতা ইউরোপের গড়ের নিচে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রী হোসে লুইস এসক্রিভা। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি না উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতার বর্তমান স্তর বিবেচনা করে কর্মঘণ্টার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এজন্য আমি মনে করি না এটিকে সমর্থনের কোনো সুযোগ আছে।“
ব্যাংক অব স্পেনের গভর্নর পাবলো হার্নান্দেজ দে কস এ পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত কঠোরভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এ বছর দেশটির জিডিপি ১২ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করছে। বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি সংকোচনের পূর্বাভাস। ২০১৩ সালে পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠে পর্যায়ক্রমে ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশকে। স্পেনের এই শক্ত অর্থনীতির নেপথ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে দেশটির পর্যটন শিল্প।
এসডব্লিউ/কেএফ/০৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ