ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে বিএনপিকে চাপে রেখেছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত নয়াপল্টনে গণসমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে অনড় সরকার। বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চড়াও হবে বিএনপির ওপর। পথে পথে বাধা সৃষ্টি করবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
আর এর মধ্যেই সারা দেশে চলছে মামলা আর গ্রেপ্তার। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিএনপি অফিসে হামলা, লাঠিচার্জ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ বিএনপির সাতজন আহত হয়েছেন। বাজিতপুরে ১০ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার হয়েছেন অর্ধশত নেতাকর্মী। মামলা হয়েছে ৬৮৭ জনের বিরুদ্ধে।
কিশোরগঞ্জ
ঢাকার সমাবেশে যোগদানের প্রস্তুতি সভায় পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মী ও পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাজিতপুর থানা পুলিশ বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আদালতে সোপর্দ করে।
আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোস্তাফিজুর রহমান মামুনকে গ্রেপ্তার করার সময় অন্যরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
ফরিদপুর ও সালথা
বোয়ালমারীতে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে এবং ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক সৃষ্টির ঘটনায় বিএনপির আট নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বোয়ালমারী থানায় একটি মামলা করা হয়। ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর শুক্রবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নাশকতা মামলাটি করেন বোয়ালমারী থানার এসআই কাজী আবুল বাশার। পরে মামলার এজাহার নামীয় বিএনপির আট নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের শুক্রবার ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া সালথা উপজেলায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা সদরের সালথা সরকারি কলেজ মাঠের পাশে সড়কের ওপর বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিস্ফোরিত ককটেলসহ নাশকতার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম। তার মধ্যে তিনটি বিস্ফোরিত ককটেলের টিনের কৌটার অংশ, দেশীয় অস্ত্র ১১টি, চারটি স্টিলের পাইপ, পাঁচটি লোহার রড, ১২টি বাঁশের লাঠি, ১৬ জোড়া স্যান্ডেল, ৪২টি ইটের ভাঙা টুকরা ও ১৯ টুকরা লাল কচটেপের অংশ।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে দুর্বৃত্তরা। এতে আমাদের দুই এসআইসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে পুলিশ শটগানের ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতমানা ৪০-৫০ জনের নামে বিস্ফোরণদ্রব্য আইনে একটি মামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মামলার পর বৃহস্পতিবার রাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর ও লৌহজং
মুন্সীগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, অটোরিকশা ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ৪৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ছয় থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিএনপি বলছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা দিতে এসব পুলিশের সাজানো নাটক। বৃহস্পতিবার শ্রীনগর, সিরাজদিখান, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ী ও গজারিয়া থানায় পাঁচটি মামলা করা হয়। এর আগে সদর থানায় একই অভিযোগে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
লৌহজংয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের বিএনপির কর্মী লাল মিয়া ও জেলা যুবদলের নেতা আল আমিনকে বেজগাঁও ইউনিয়ন থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ)
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে রাতের আঁধারে ককটেল বিস্ফোরণ ও অটোরিকশা ভাঙচুর করার মামলার আসামি সোনারং টঙ্গীবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক তাইজুল ইসলামকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে উপজেলার টঙ্গীবাড়ী বাজার কাঁচা বাজার আড়ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা)
চরফ্যাশন উপজেলায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৫৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চরফ্যাশন পৌরসভা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হক ওরফে হান্নান খন্দকার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় চরফ্যাশন পৌরসভা যুবদলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক মো. মিল্টন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আসাদ, পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. ইয়াজ ক্বারি, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য মো. সাকিব, যুবদল নেতা মো. মাকসুদুর রহমান, মো. কবির, মো. মনির বদ্দর ও ছাত্রদল নেতা মো. তারেকসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা ও সোনারগাঁ
রূপগঞ্জে ছাত্রলীগ কর্মী মোটরসাইকেলে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ও আহত করার মামলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে সোমবার মামলা করেন উপজেলা ছাত্রলীগ কর্মী রাশেদুল প্রধান। মামলায় বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক খোকন ও অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুনসহ ৩৮ জনকে নামীয় ও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও নাগরিক ঐক্যের ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ফতুল্লায় পুলিশের দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর আষাঢ়ীয়ার চর এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের মামলায় ও পুরাতন বিস্ফোরক মামলায় বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মহসিন, গাড়ি চালক জুয়েল আহম্মেদ ও কর্মী লিটনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাকেরগঞ্জ (বরিশাল)
বাকেরগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান রুবেলসহ তিন বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান রুবেল, যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান হোসেন, গারুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফয়সাল আহম্মদ টিটু।
এসডব্লিউএসএস/১২১৫
আপনার মতামত জানানঃ