যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামী পল পেলোসির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দেশটির স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরের দিকে এক আততায়ী ওই দম্পতির সান ফ্রানসিস্কোর বাড়িতে ঢুকে পল পেলোসির ওপর হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালায়। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
জানা যায়, পল পেলোসির ওপর হামলাকারী ন্যান্সি পেলোসিকে হামলার জন্য খুঁজছিল। হামলাকারী পল পেলোসির মুখোমুখি হয়ে কোথায় ন্যান্সি পেলোসি, কোথায় ন্যান্সি পেলোসি বলে চিৎকার করে।
এক বিবৃতিতে পেলোসির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ৮২ বছর বয়সী পলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে। তবে হামলার কারণ কী, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া হামলার সময় পেলোসি বাসায় ছিলেন না বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চটেছেন বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর শুক্রবারের হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
ফিলাডেলফিয়ায় একটি প্রচার সমাবেশে বক্তৃতাকালে বাইডেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার ‘কোন স্থান নেই’ এবং ‘যথেষ্ট হয়েছে আর নয়’ বলে উল্লেখ করেন।
বাইডেন মিডিয়ার রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, আততায়ী ‘ন্যান্সি কোথায়’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিল। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে মারাত্মক হামলার সময় একই শ্লোগান ব্যবহৃত হয়েছিল।
আততায়ী ‘ন্যান্সি কোথায়’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিল। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে মারাত্মক হামলার সময় একই শ্লোগান ব্যবহৃত হয়েছিল
বাইডেন বলেন, ‘আমি এটি বানিয়ে বলছি না’; মিডিয়ায় ‘এই রিপোর্ট করা হয়েছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি আছে। উভয় দলের সদস্যরা রাজনৈতিক সহিংসতার সম্ভাবনা সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ভয়ানক রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই হামলার ঘটনা ঘটল। এই ঘটনার পর নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ভয়ানক রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে সরকারের একটি সতর্কবার্তা। শুক্রবার পল পেলোসির উপর হামলার খবরের মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই মার্কিন সরকার সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে একটি বুলেটিন বিতরণ করেছে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে প্রার্থী এবং নির্বাচনী কর্মীদের ওপর সহিংসতা ও হামলার ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। আদর্শগতভাবে ক্ষুব্ধ চরমপন্থীরা এস হামলা চালাবে।
এছাড়া শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঘোষণা করেছে, পেনসিলভানিয়ার এক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা কংগ্রেসম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই কংগ্রেসম্যান ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট এরিক সোয়ালওয়েল বলে ধারণা করা হচ্ছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে কংগ্রেসম্যানের ওয়াশিংটন অফিসের একজন স্টাফ সদস্যকে বলা যে, তিনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে আসতে চলেছেন।
আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে যারা জয়লাভ করবে তারাই পরের বছর মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পাবে। রিপাবলিকান পার্টি তার সমর্থকদেরকে বলছে যে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ঠেকানোর এটা শেষ সুযোগ। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটরা বলছে যে, এই নির্বাচনে তারা হেরে গেলে মার্কিন গণতন্ত্রই ধংসের ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
এর আগে ডোনল্ড ট্রাম্প সহ রিপাবলিকান পার্টির বহু নেতা ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে হামলায় উস্কানি দিয়েছিল। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন আরও তীব্র হয়েছে এবং মার্কিন গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ