আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই যাতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে নতুন প্রজন্মসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী অংশ নেন।
সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই ভেতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’
গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। সুতরাং অতীতে এই বাংলাদেশে রেকর্ড রয়েছে, তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। কিন্তু আজ আমরা দেখছি, ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবেই। আবারও আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ নতুন প্রজন্মসহ দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে, জাতীয় নির্বাচনে আপনারা ভোট দিয়ে আপনাদের সেই প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন।’
সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের সময়ে আমরা দেখেছি, তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে আইনের প্রতি সম্মান থাকবে, আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে, স্বৈরাচারের সেই একই যে ঘটনা, সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
‘যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি’—এমন প্রশ্ন তোলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তিমানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা শপথে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, পরামর্শ থাকবে, জনগণের বিশ্বাস–ভালোবাসা নষ্ট হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।’
একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান, তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
সভার সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন।
আপনার মতামত জানানঃ