সৌদি আরবে ২৪ বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরআর শহর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি ২৪ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে মর্মে জানতে পেরে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তাদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংকে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কর্মকর্তা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি মাকতাব তাওয়াসুল আলসারি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এস. আনোয়ার ওভারসিজের মাধ্যমে ওই নারী কর্মীদেরকে সৌদিতে নিয়ে সৌদি নিয়োগ কর্তাদের বাসায় কাজে না পাঠিয়ে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন আটকে রাখে।
দূতাবাস জানায়, আটকে রাখা এসব কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়ের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদেরকে কোনো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়নি। দূতাবাসের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে নারী কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সৌদি এজেন্সি বাধা দেয়।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ২৪ জন নারী গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে সৌদি ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধার করা নারী গৃহকর্মীদের পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
অভিযুক্ত সৌদি রিক্রটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের এজেন্সি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের সহায়তায় উদ্ধার করা নারী গৃহকর্মীদের দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি মাকতাব তাওয়াসুল আলসারি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এস. আনোয়ার ওভারসিজের মাধ্যমে ওই নারী কর্মীদেরকে সৌদিতে নিয়ে সৌদি নিয়োগ কর্তাদের বাসায় কাজে না পাঠিয়ে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন আটকে রাখে।
অভাব-অনটন বেশি থাকা এবং আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষের পাশাপাশি বিদেশগামী নারী কর্মীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। তারা যান মূলত মধ্যপ্রাচ্যে এবং গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। কিন্তু সেখানে নারী কর্মীরা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
প্রবাসে কাজের জন্য যাওয়া নারী কর্মীদের ওপর করোনা মহামারির প্রভাব যাচাইয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) পরিচালিত এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, পরিবারের ভাগ্য বদলাতে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে কর্মস্থলে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন ৩৫ শতাংশ নারী কর্মী। মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার ৫২ শতাংশ আর যৌন নিপীড়নের শিকার ১১ শতাংশ নারী। নিয়োগকর্তা ও তার স্ত্রীর হাতে এসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। দেশে ফিরে তালাক, অসুস্থতা, সামাজিক কলঙ্কসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছেন ২২ ভাগ নারী।
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স। প্রায় সোয়া কোটি বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। আগে শুধু পুরুষরাই কাজের জন্য বিদেশে যেতেন; কিন্তু গত এক দশকে অনেক নারী শ্রমিকও এসব দেশে বিশেষত গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করার জন্য যাচ্ছেন।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত নারীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৬৬ হাজার। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই রয়েছেন ৪ লাখের উপর। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গৃহ খাতে কর্মী নিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সৌদি সরকারের একটি চুক্তি হয়।
এ চুক্তির আওতায় বিনা খরচে সৌদি আরব যেতে পারেন নারীরা। এসব নারীর বেতন ৮০০ রিয়াল বা ১৭০০০ টাকা। দুই বছরের জন্য এই চুক্তির আওতায় নারীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন। এ চুক্তির অধীনে ৩ লাখের মতো নারী শ্রমিক সৌদি আরব গেছেন।
যেসব নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য বিদেশে যান, তাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। অসচ্ছল বা স্বামী পরিত্যক্ত নারীরাই মূলত কাজ করার জন্য এসব দেশে যাচ্ছেন। যখন নারী শ্রমিকদের কথা আসে তখন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গৃহকর্মী নিয়োগের কথা বলে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে যৌনকর্মী হিসেবে। তারা সেখানে গিয়ে কী কাজ করছেন, কেমন আছেন, তার দেখভালও সরকার করে না। বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের প্রতারণা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে সক্রিয় হতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ