উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার উপকূলে অভিবাসীবোঝাই নৌকা অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে গেছে। এতে অন্তত ৮ অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
ইতালি যাওয়ার সময় নৌকা ডুবে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
স্টেট মোনাস্টির রেডিও’র বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করার সময় বৃহস্পতিবার তিউনিসিয়ার কাছে একটি নৌকা ডুবে অন্তত আটজন অভিবাসী মারা গেছেন। এ ঘটনায় আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এছাড়া উপকূলরক্ষীরা মাহদিয়া অঞ্চলের চেব্বা শহরে ডুবে যাওয়া নৌকায় থাকা ১৪ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। ডুবে যাওয়া ওই নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি আরোহী বহন করা হচ্ছিল।
একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, নৌকাটি চলতি সপ্তাহে স্ফ্যাক্স অঞ্চলের এল আওয়াবেদ উপকূল থেকে যাত্রা করেছিল। নৌকায় থাকা অধিকাংশ অভিবাসী তিউনিসিয়ান বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
রয়টার্স বলছে, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি দিতে অভিবাসীদের কাছে স্ফ্যাক্সের উপকূলরেখা একটি প্রধান প্রস্থান পয়েন্ট বা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, তিউনিসিয়ার উপকূলে বহু মানুষ ডুবে গেছে। তিউনিসিয়া এবং লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টার ঘটনাও বেড়েছে অনেক। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে।
গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর দেশটির উপকূলীয় এলাকা থেকে ২০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। অন্যদিকে ২০২১ সালে অন্তত ১৫ হাজার অভিবাসী অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উপকূলে পৌঁছেছেন।
আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি দিতে অভিবাসীদের কাছে স্ফ্যাক্সের উপকূলরেখা একটি প্রধান প্রস্থান পয়েন্ট বা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর’র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ২০২১ সালে ১ লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছেছেন। ২০২০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৯৫ হাজারের বেশি।
বিশ্বে করোনার আগমনের পর থেকে যে কোনো কারণেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠেছে। অভিবাসনপ্রার্থী মানুষের জন্য প্রায় আরও অসম্ভব হয়ে উঠেছে অনুমোদন পাওয়া। এজন্য অনেকেই ঝুঁকছে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অভিবাসনের প্রতি। আর এভাবে দেশান্তরি হতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে, কেউবা হচ্ছেন নিখোঁজ।
ভালো পারিশ্রমিকের আশায় কয়েক বছর ধরে পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়া যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সেখান থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন আটক অবস্থায়।
গত এক দশক ধরে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে লিবিয়া। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রথমে লিবিয়ায় জড়ো হন, তারপর ছোট নৌকায় চেপে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝেই অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌকাগুলো মাঝ সমুদ্রে ডুবে যায়।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে। এ বছর ভূমধ্যসাগরে চার হাজারেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তনই মূলত এই অভিবাসন প্রত্যাশার কারণ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৩
আপনার মতামত জানানঃ