মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মো. জাহাঙ্গীর আজিজ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে পড়েছিল মর্টারশেল। তখন সীমান্তে মর্টার শেল ছোড়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে মিয়ানমারকে সতর্ক করবে বাংলাদেশ।ল, গত রোববার বিকেলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু বাজার এলাকায় মিয়ানমারের ছোড়া এই মর্টার শেলের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এ কথা বলেন। তবে কতটা সতর্ক হয়েছে মিয়ানমার তা বেশ স্পষ্ট।
ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দুপুরে স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছে যে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ৩-৪ শত গজ ভেতরে মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার ঘুরতে দেখা গেছে। এ সময় মিয়ানমার থেকে কয়েক রাউন্ড গোলাবর্ষণ করা হয়। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
‘মিয়ানমার বাহিনীর ছোঁড়া অধিকাংশ গুলি বাইশফাঁড়ি সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় পড়েছে। এছাড়া একটি গুলি পড়েছে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পাহাড়ে,’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে গোলাবর্ষণের খবর নানা সূত্রে বিজিবি শুনেছে। খবরটি শোনার পর বিজিবি তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ঘটনার ব্যাপারে গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ওড়ার খবর আমরা বিজিবির কাছ থেকে শুনেছি। আগামীকাল এ বিষয়ে দাপ্তরিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া ২টি মর্টার শেল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের উত্তর পাড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এসে পড়ে। পরদিন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল সেটি নিষ্ক্রিয় করে।
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় মর্টার শেল দুটি পাওয়া যায়।
বান্দরবান পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, মর্টার শেল দুটি সীমান্ত থেকে আধ কিলোমিটার ভেতরে এসে পড়ে। এর মধ্যে একটি ঘুমধুম ইউনিয়নে ২ নম্বর ওর্য়াডের তুমব্রু সীমান্তের উত্তর জামে মসজিদের পাশে ও অন্য শেলটি সেখান থেকে ২০০ গজ দূরে পাওয়া যায়। মর্টার শেল দুটি মিয়ানমার থেকে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, মর্টার শেল দুটি খুব সম্ভবত আমাদের দিকে টার্গেট করে ছোড়া হয়নি। এটি মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর গোলাগুলির মধ্যে এগুলো আমাদের সীমান্তে এসে পড়েছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্কবস্থায় রয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের ভেতরে সীমান্ত এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। যে দুটি মর্টারশেল এসে পড়েছে তাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।
রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখনো নিজ দেশের জনগণের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চলেছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত। তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৩১
আপনার মতামত জানানঃ