সড়ক থেকে এবার আওয়ামী লীগের নেতারা পৌঁছে গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির ভিতির। প্রসঙ্গত, যশোরে এক রাতে বিএনপির চার নেতার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ চার বিএনপি নেতার বাড়িতে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি স্প্রাইট, সেভেনআপ, কোকাকোলার বোতলও ব্যবহার করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুখে কাপড় বেঁধে এ হামলা চালিয়েছে। যশোর বিএনপির একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনস্রোত দেখে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির নেতারা।
শনিবার দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং থেকে এ অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা জানান, রাত দেড়টার দিকে একদল লোক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাসার সামনে জড়ো হয়। এরপর ‘জয় বাংলা স্লেগান দিয়ে’ বাড়ির ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বাড়ির কাঁচের জানালাগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
এরপর যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খানের বাসভবনে একইভাবে স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসভবনের সিটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা একটি সিলভার কালারের মাইক্রোবাস, ৪ থেকে ৫টি প্রাইভেট কার এবং ১০টির অধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। যার মধ্যে একটি সাদা এবং একটি কালো রংয়ের প্রাইভেটকার ছিল।
এ হামলার প্রতিবাদে সকালে নগর বিএনপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড শাখার নেতাকমীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ ছাড়া বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়ন থেকে দলীয় প্রগ্রাম শেষ করে ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন বিএনপি নেতা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, “শুক্রবার রাত একটার দিকে পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ রাত ২টার কিছু সময় আগে জানালা ভাঙচুরের শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠি।”
“জানালাতে উঁকি দিয়ে দেখি ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক বাড়িতে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারছে। পরে আমি ৯৯৯-এ ফোন করার পর কিছু পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে গেছে। কেবল রাজনৈতিক কারণে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। বরাবরের মতো এই সরকারের আমলে বিচায় পাইনি; এবারও পাবো বলে আশা করি না। এমন পরিস্থিতি নিয়ে বাড়ির বাচ্চা ও নারীরা খুবই আতঙ্কিত।”
হামলার বিষয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “বিএনপি যখনই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের সকল ন্যায্য দাবি এবং অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালন করে, তখনই সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা জনতার আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই ধরনের হামলা চালিয়েছে।”
“এর আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একই ভাবে দলের নেতা কর্মীদের বাসভবনে হামলা চালায়। এভাবে রাতের আধারে সন্ত্রাসী হামলা করে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি করা যাবে না। যতদিন জনগণের অধিকার আদায় না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।”
অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, “ষড়যন্ত্রের মাস আস আগস্ট। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বিএনপি নিজেরা তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দোষারোপ করছে। রাজনীতিতে বিএনপির এই অপরাজনীতিকে আমি নিন্দা জানাই।”
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানান, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। এ বিষয়ে বিএনপি থেকে কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, জেলা বিএনপির চার নেতার বাড়িতে ভাংচুরের প্রতিবাদে এদিন জেলা বিএনপির কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ