জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলছে। ফলে কমে যাচ্ছে শ্বেত ভালুকের খাবার। ক্ষুধা মেটাতে ময়লা-আবর্জনার দিকে ঝুঁকছে বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণী।
সম্প্রতি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী সতর্ক করেছেন, ময়লা-আবর্জনা বর্তমানে বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা শ্বেত ভালুকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যে কারণে প্রাণীটির সংখ্যা আরো কমে আসার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পোলার বিয়ার বা শ্বেত ভালুকের প্রধান আবাসস্থল মেরু অঞ্চলের হিমশীতল পরিবেশ। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে যেভাবে মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে, তাতে বিনষ্ট হচ্ছে তাদের বাসস্থান। এরই মধ্যে বিপণ্ন প্রাণীর তালিকায় নাম উঠে এসেছে শ্বেত ভালুকের। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা না গেলে এই শতাব্দীর শেষের দিকে প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
রয়টার্সের খবর অনুসারে, শ্বেত ভালুক উত্তরের আবর্জনার ভাগাড়ের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে প্রায়ই মারাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বলে অরিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু ডেরোচার বলেন, ভালুক আর আবর্জনা খুবই খারাপ একটি সমন্বয়। বাদামি ভালুক আর কালো ভালুকের দিক থেকে এ বিষয়ে আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। বর্তমানে শ্বেত ভালুকের জীবনযাপনের এটি প্রভাব বিস্তার করছে।
শ্বেত ভালুক সিল শিকারের জন্য মূলত সমুদ্রের বরফের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আর্কটিকের উষ্ণতা চার গুণ বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মের সময় সমুদ্রের বরফ খুব দ্রুত গলে যায় এবং শরতের দিকে দীর্ঘ সময় নিয়ে জমতে থাকে। এ কারণে নিজ এলাকা ছেড়ে শ্বেত ভালুকদের বেশি সময় ডাঙায় কাটাতে হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বেত ভালুক এখন রাশিয়ার বেলুশ্যা গুবার মতো আর্কটিক ও সাব-আর্কটিক জায়গাগুলোয় আলাস্কার কাকটোভিকের ইনুইট হান্ট থেকে অবশিষ্ট তিমির হাড়ের স্তূপের আবর্জনা সংরক্ষণ করছে। বিলুপ্তপ্রায় একটি প্রাণীর এমন আচরণ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আবাসিক এলাকার অধিবাসীদের নিরাপত্তায় ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজাররা ভালুক হত্যা করতে পারেন। অন্যদিকে আবর্জনার মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারণের ফলে প্রাণীগুলোর অসুস্থ হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
খাবারের প্যাকেটগুলো প্রায় সময়েই উচ্ছিষ্টে পরিণত হয়। যে কারণে শ্বেত ভালুকদের প্লাস্টিক ও খাওয়ার অযোগ্য বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করতে হয়। এটি প্রাণীদেহের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের বাধা তৈরি করতে পারে।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ পোলার বিয়ারস ইন্টারন্যাশনালের কনভারসেশন বিভাগের সিনিয়র পরিচালক জিওফ ইয়র্ক বলেন, খাবার হিসেবে প্লাস্টিক গিলে ফেলার পর সেটি শরীরে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বা এর থেকে কী কী রোগ হতে পারে সে বিষয়ে শ্বেত ভালুক অজ্ঞাত।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। আর্কটিক অঞ্চলে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কানাডার নুনাভুট যেখানে কয়েক হাজারের বেশি শ্বেত ভালুক বসবাস করে সেখানকার জনসংখ্যা ২০৪৩ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন খুবই কঠিন।
কেননা এ অঞ্চলের ভূমি অধিকাংশ সময়েই বরফে আচ্ছাদিত থাকে। যে কারণে আবর্জনা মাটির নিচে পুঁতে ফেলা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ট্রাকে করে আবর্জনা অপসারণ ব্যয়বহুল। বিজ্ঞানীরা জানান, এ সমস্যা সমাধানে সরকারি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
ডিরোচার বলেন, কানাডার পূর্বে অবস্থিত আর্কটিক অঞ্চলে এরই মধ্যে মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এটি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে যেসব এলাকায় আগে কখনো শ্বেত ভালুকের পদচারণা ছিল না, সেখানে এখন তাদের উপস্থিতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পৃথিবীতে আনুমানিক ২৬ হাজার শ্বেত ভালুক অবশিষ্ট রয়েছে। ড. শাপিরো বলেন, এটি স্পষ্ট যে, আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার কমাতে না পারলে মেরু ভালুক বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এই অসাধারণ প্রজাতি সম্পর্কে আমরা বেশি বেশি শিখতে পারলে তাদের আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারবো।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৭
আপনার মতামত জানানঃ