মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ভারত বাংলাদেশে মাংস রপ্তানি করতে চায়৷ এ কথা জানিয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ভারত সরকার৷ পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ভারত বাংলাদশের আমদানি নীতিসহ সব নীতি মেনে মাংস আগের মতোই রপ্তানি করতে পারবে, কিন্তু বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে না৷
কিন্তু ভারত এখন বাংলাদেশে গরু-মহিষের মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের মাংস রপ্তানি করতে চায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এজন্য ভারত বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে৷ সেটার ওপর এখন কাজ হচ্ছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘গত ২৪ এপ্রিল নতুন বাণিজ্যনীতি হওয়ার পর থেকে ভারত থেকে মাংস আমদানি বন্ধ আছে৷ কারণ, আমদানি করতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোদ লাগবে৷”
তিনি জানান, ভারত থেকে প্রধানত মহিষের মাংস এলেও, কিছু গরুর মাংসও আসে৷ বাংলাদেশ আমদানি নিষিদ্ধ করেনি৷ নীতি পরিবর্তন করেছে৷ গত এপ্রিলে ভারত থেকে হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়ার বিষয়টি নতুন শর্ত হিসেবে যোগ করার পর বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দেয়া এক চিঠিতে ভারত থেকে বাংলাদেশে মাংস রপ্তানির সুযোগ চেয়েছে নতুন কোনো শর্ত ছাড়াই৷
চিঠিতে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ মাংস আমদানিতে শতকরা ২০ ভাগ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে৷ ভারত থেকে হিমায়িত হাড়বিহীন গরুর মাংস আমদানির জন্য ৪-৫ কেজি থেকেই এই কর বসানো হবে৷”
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সাফটা চুক্তির সুবিধাকে লঙ্ঘন করে৷ তারা বলছে, ভারতীয় কোম্পানিগুলো উচ্চ-মানের ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং বাংলাদেশে তারা অ-প্রতিযোগিতামূলক বাজারের মুখে পড়ছে৷ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম এই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন৷ সূত্র মতে, অল ইন্ডিয়ান বাফেলো অ্যান্ড শিপ মিট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএমএলইএ) ও বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমআইটিএ) বাংলাদেশ সরকারের এসব সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷
বিএমআইটিএ-র সভাপতি শামীম আহমেদ দাবি করেন, ‘‘বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বিশ্বে গড় বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি৷ বিশ্বে গরুর মাংসের গড় কেজি ৪.২৭ ডলার, অথচ বাংলাদেশে এখন সাত ডলার৷ তাই ভোক্তাদের কম দামে গরুর মাংস দিতে আমদানির কোনো বিকল্প নেই৷”
বাংলাদেশে এখন ৬৭টি প্রতিষ্ঠান ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গরু-মহিষের মাংস আমদানি করে৷
নিজেদের ক্ষতি করে কেন আমদানি?
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে বছরে ৭.৪ মিলিয়ন টন মাংসের চাহিদার বিপরীতে ৮.৪৪ মিলিয়ন টন মাংস উৎপাদন হচ্ছে৷ তারপর বিদেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি করা হচ্ছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪টি দেশ থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ডলারের হিমায়িত মাংস আমদানি করা হয়৷
বিলাসবহুল হোটেল ও ফুড চেইনের নামে এসব মাংস আমদানি করা হয়৷ সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ভারত থেকে৷ ভারতীয় মহিষের মাংস বাংলাদেশে গরুর মাংসের বাজার দখল করছে৷ বিলাসবহুল হোটেল ও ফুড চেইনের নামে আনা হলেও এগুলো সাধারণ বাজারেই বিক্রি করা হয়৷
ভারত ছাড়াও ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে মাংস আমদানি করা হয়৷
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ ইমরান বলেন, ‘‘ভারত থেকে গরু-মহিষের মাংস আমদানির সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশের খামারিরা বিপদের মুখে পড়বে৷ একটি মহল তাদের ব্যবসার স্বার্থে ভারতের মাংস আমদানির পায়তারা করছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশে গরু পাঠানো বন্ধের পর তা আসলে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে৷ আমরা এখন গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ এখন তারা মাংস রপ্তানি করে বাংলাদেশের এই শিল্পকে পথে বসাতে চাইছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেশি, কারণ, অ্যানিমেল ও পোল্ট্রি ফিডে সরকারের নীতি সহায়ক নয়৷ হালাল-হারামের প্রশ্ন তুলে মিল বোন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এসব ব্যাপারে সরকার সহায়ক নীতি করলে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকা হবে৷”
মন্ত্রীর সাফাই
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রোজাউল করিম বলেন, “আমরা বাংলাদেশে গরু-মহিষের মাংস আমদানির পক্ষে নই৷ কারণ, আমরা এখন মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ কিন্তু আমরা আমদানি বন্ধ করতে পারি না৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যে সাপটা চুক্তি আছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী আমরা আমদানি একেবারে বন্ধ করলে চুক্তির লঙ্ঘন হবে৷”
“তবে এ ব্যাপারে আমাদের যে নীতি আছে সেটা মেনেই ভারতকে রপ্তানি করতে হবে৷ এর বাইরে কোনো সুবিধা তারা পাবে না৷”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ভারত থেকে মহিষের মাংস আসে৷ গরুর মাংস আসে না৷ ওটা ওরা ধর্মীয় কারণে পাঠায় না৷”
তিনি বলেন, ‘‘সরকার খামারিদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে৷ আমরা চাচ্ছি পশু খাদ্যের আমদানি নির্ভরতা কমাতে৷”
আর মিল বোন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুকরের বা হারাম পশু দিয়ে তৈরি হয়৷ তাই হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে মিল বোন আমদানি করা যাবে না৷”
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫৫
আপনার মতামত জানানঃ