পোল্যান্ডের একটি প্রাক্তন নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কাছে আট হাজার মানুষের সমতুল্য মানুষের ছাই সমন্বিত একটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে।
বুধবার (১৩ জুলাই) দেশটির ইন্সটিটিউট অফ ন্যাশনাল মেমব্রেন্স এ দাবি করেছে।
ইন্সটিটিউটটি পোল্যান্ডের নাৎসি দখল এবং কমিউনিস্ট যুগে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করে জানায়, ধ্বংসাবশেষগুলি সোলদাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কাছে খুঁজে পাওয়া গেছে। ওয়ারশ-এর উত্তরে অবস্থিত ওই এলাকাটি বর্তমানে দিজিয়ালদো নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দিজিয়ালদোর নাম ছিল সোলদাউ। যুদ্ধের শুরুর বছর, ১৯৩৯ সালেই এ শহরে রাজনৈতিক বন্দিশিবির (কনসেনট্রেশন ক্যাম্প) খুলেছিল নাৎসি বাহিনী। গণকবরটি সেই বন্দিশিবিরের সংলগ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, লোকজনকে ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যার পর তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে তার ছাই এই গণকবরে ফেলে দেওয়া হতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডে নিহতদের স্মরণে দেশটির সরকারের গঠিত প্রতিষ্ঠান পোল্যান্ড’স ন্যাশনাল রিমেমব্রান্স ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা, তদন্তকারী টমাস জানকোস্কি বলেন, সেখানে প্রায় ১৭.৫ টন বা ১৫ হাজার ৮০০ কেজি মানবদেহের ছাই-ভস্ম মিলেছে। যা দেখে দাবি করাই যেতে পারে সেখানে অন্তত আট হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল বা হত্যা করা হয়েছিল।
লোকজনকে ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যার পর তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে তার ছাই এই গণকবরে ফেলে দেওয়া হতো।
প্রতি দুই কেজি ছাই একজন মানুষের ভস্ম হিসেবে ধরে মোট নিহতের সংখ্যা বের করেছেন তদন্তকারীরা। জানকোস্কির দাবি, গণকবরে দাফন করা নিহতদের ‘সম্ভবত ১৯৩৯ সালের দিকে হত্যা করা হয়েছিল এবং বেশিরভাগই পোলিশ অভিজাতদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
তবে টমাজ জানকোস্কি আট হাজার মানুষের দেহাবশেষ থাকার দাবি করলেও পোল্যান্ডের ইতিহাসবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই গণকবরে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহের ছাই রয়েছে। এই নিহতদের মধ্যে দিজিলয়ালদো ও তার আশপাশের এলাকার ধর্মযাজক ও বুদ্ধিজীবীরাও ছিলেন।
নিহতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ডিএনএ টেস্টের জন্য এসব দেহভস্মের নমুনা বিজ্ঞানাগারে পাঠানো হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
গনকবরটিতে মানব দেহভস্মের পাশাপাশি আধপোড়া কাপড়, বোতাম ও অন্যান্য জিনিসও পাওয়া গেছে, তবে কোনোটিই মূল্যবান নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, হত্যার পর মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে নিহতদের দেহ তল্লাশি করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করত নাৎসী সেনারা।
যুদ্ধ শেষের বছর ১৯৪৪ সালে নাৎসি কর্তৃপক্ষ যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য ইহুদি বন্দীদের মৃতদেহ খুঁড়ে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়।
পোমেরানিয়ান মেডিকেল ইউনিভার্সিটির জেনেটিক্স গবেষক আন্দ্রেজ ওসোস্কি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেসব নিয়ে পরীক্ষাগারে গবেষণা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ডিএনএ বিশ্লেষণ করার পর আমরা নিহতের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউজ মোরাউইকি বুধবার এক বিবৃতিতে জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসী বাহিনী পোল্যান্ডে যে গণহত্যা ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করেছে, সে বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে দেশটির সরকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের যেসব দেশে সবচেয়ে নিষ্ঠুর অভিযান চালিয়েছে নাৎসী সেনারা, সেসবের মধ্যে অন্যতম পোল্যান্ড। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল নাৎসী সেনারা, তাদের মধ্যে ৩০ লাখই ছিল ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার বাইরে দেশটির যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল নাৎসীরা, বর্তমান সময়ের নিরিখে তার পরিমাণ ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
প্রধানমন্ত্রী মোরাউইকি অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি বাবদ এখনও কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি জার্মানি।
জার্মানির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ক্ষতিপুরণ দেওয়া থেকে দায়মুক্তি নিয়েছে জার্মানি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৬
আপনার মতামত জানানঃ