সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যায় মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকার প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে পারেনি বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির সদস্যদের বার্ষিক সভায় এমন মত প্রকাশ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার এ সভা হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সংগঠনটি।
আজকের ভার্চ্যুয়াল সভায় টিআইবির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৪৭ জন সদস্য অংশ নেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন টিআইবির সাধারণ পর্ষদে সদস্যদের নির্বাচিত প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী।
সভায় টিআইবির সদস্যরা বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হওয়া সত্ত্বেও এই বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকার প্রত্যাশিত পর্যায়ের প্রস্তুতি ও সাফল্য দেখাতে পারেনি। দুর্যোগ মোকাবিলায় ঘাটতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আরও সক্রিয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে সম্মিলিতভাবে ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা, প্রতিবেশ রক্ষা, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হতাশাজনক অবস্থান থেকে উত্তরণে দ্রুত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করেন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের নামে মূলত শুধু চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। আর রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রভাবশালীদের যাঁরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ হোক, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার একটা সূত্র পাওয়া যায়।
প্রশাসনিক দিক থেকেও একই অবস্থা চলে আসছে। দুর্নীতির মূল হোতা রাঘববোয়ালরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। সে কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়টি ক্রমশই আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এসবের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় আছে।
দেশে জবাবদিহিহীন ও স্বেচ্ছাচারের নানা অমানবিক দৃষ্টান্ত ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সদস্যরা। তাঁরা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আইনের শাসনের স্বার্থে এখনই এই প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার জোরালো আহ্বান জানান। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে একযোগে কাজ করা, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকাতে স্কুলপর্যায়ে নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদারের তাগিদ দেন টিআইবির সদস্যরা।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে সিলেট
চলমান বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি ছিলেন। সিলেটে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে কমেছে কুশিয়ারা নদীর পানি।
সিলেটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামেও। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে পানি কমেছে কানাইঘাট পয়েন্টে। কুশিয়ারা নদীর পানিও কমেছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে সিলেট। টানা ১৫ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে অনেক এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।
গত ১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা শুরু হয়। ওইদিনই তলিয়ে যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরের শাকিল আহমদের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘ঘরে ১৫ দিন ধরে পানি। পানি কিছুতেই নামছে না। কালকে থেকে আবার পানি বাড়ছে।
‘ঘরে পানি, রাস্তাঘাটও তলিয়ে আছে। এই অবস্থায় আর কতদিন চলবে বুঝতেছি না। এমন দুর্ভোগ জীবনেও পোহাতে হয়নি।’
মে মাসের বন্যায়ও ঘরে পানি উঠেছিল জানিয়ে শাকিল বলেন, ‘তখনও প্রায় ১০ দিন ঘরে পানি ছিল। এবার আরও কতদিন থাকতে হয়, কে জানে।’
১৫ দিন ধরে ঘরে পানি পলাশ হোসেনেরও। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা পলাশ বলেন, ‘১৫ দিন ধরে আরেকজনের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে আছি। তাও পানির কারণে গৃহবন্দি অবস্থায়। এভাবে কত দিন থাকা যায়।’
পানির কারণে দোকান খুলতে পারছেন না জানিয়ে রেলস্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘১৫/১৬ দিন ধরে দোকান বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে ভিক্ষায় নামতে হবে।’
শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা। তবে তিনি এও বলেন, ‘শনিবার থেকে বৃষ্টি কমবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’
সবশেষ পাওয়া তথ্যের হিসাবে, জেলার ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩২
আপনার মতামত জানানঃ