গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। আসামে বন্যায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।
রাস্তায় ধস নেমে বন্ধ অরুণাচলের একাধিক পাহাড়ি রাস্তা। ত্রিপুরার একাধিক অঞ্চলে রাস্তায় নৌকা চলছে। বন্যা এবং ধসে বিধ্বস্ত মেঘালয়। বন্যা পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের তিনটি জেলায়। দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের রাস্তায় ধস। তবে এখনো পর্যন্ত বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আসামে।
ভারতের আসাম রাজ্যে দুটি বড় ইভেন্ট চলমান এখন। একটি হলো মহারাষ্ট্রের বিধায়কদের ক্ষমতার লড়াইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অন্যটি বিধ্বংসী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই।
রাজ্যের ৩৫টি জেলার মধ্যে ২৮টিতে প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ এ বছর এপ্রিল থেকে বন্যার শিকার। এর ফলে সেখানে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসে মারা গেছেন কমপক্ষে ১১৭ জন। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর শিলচরের শতকরা ৮০ ভাগ পানির নিচে। সেখানে মানুষ খাদ্য ও খাবার পানির জন্য প্রতিক্ষণ লড়াই করছে।
এমন অবস্থার মধ্যে গুয়াহাটিতে অবস্থিত র্যাডিসন ব্লু হোটেল পরিণত হয়েছে শিবসেনাদের ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। মহারাষ্ট্রে তাদের মধ্যে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তা এই হোটেলকেও আক্রান্ত করেছে।
এপ্রিল থেকে চলা আসামজুড়ে ei তীব্র বৃষ্টিপাতে বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মধ্য ও পশ্চিম আসামে পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বন্যার কারণে রাজ্যটিতে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের কাছাড় জেলা সদর দপ্তর এবং শিলচরের পরিস্থিতি সংকটজনক।
শিলচরের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শ্মশান ও কবরস্থান বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে শেষকৃত্যের জন্য মোড়ানো মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছে।
কাছাড়ের ডেপুটি কমিশনার কীরথী জলি বলেছেন, গুরুতর রোগীদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য নিয়মিত অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারছে না।
ডেপুটি কমিশনার জলি বলছেন, ছাদে বসবাসকারী প্রায় ৪০০ পরিবারের জন্য জল বিশুদ্ধকরণ মেশিন স্থাপন করে দেয়া হয়েছে।
বন্যাপ্লাবিত অঞ্চল ম্যাপিং এবং দুর্বল এলাকায় ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করার জন্য শিলচরে দুটি ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় নাগাল্যান্ডের স্বাভাবিক জীবনও ব্যাহত হয়েছে। অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় এরই মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তবে প্রাণহানির কোনো খবর এখনও পাওয়া যায়নি।
আসাম ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ ও মেঘালয়ে এপ্রিল থেকে বৃষ্টির কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই দুই রাজ্যে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আসামের পাঁচ হাজার ১৩৭টি গ্রাম আপাতত জলের তলায় বলে প্রশাসন জানিয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বরপেটা জেলার। সেখানে ১২ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ বন্যার কারণে ঘরছাড়া। দারাং এবং নওগাঁওয়ের অবস্থাও ভয়াবহ।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বেশকিছু গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে। চর এলাকাতেও পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। কাজিরাঙা অভয়ারণ্যের ভিতরে বন্যার জল ঢুকেছে বলে জানা গেছে। প্লাবিত জঙ্গলসংলগ্ন একাধিক গ্রাম।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ