দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
এদিকে সিলেটের ওসমানীনগরে এক মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসার সুপার কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই মাদ্রাসা সুপারকে শাস্তি হিসেবে ৩০ বার কান ধরে উঠবস ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া ওই মাদ্রাসা সুপারকে মুচলেকা নিয়ে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করেছেন মাদ্রাসা কমিটি ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মাদ্রাসার অন্য একজন শিক্ষক অভিযুক্ত শিক্ষককে পালাতে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি উপজেলার সাদিপুর ইউপির নুরপুর গ্রামের নুরপুর হাফিজিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় ঘটেছে।
অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার আব্দুল কাদির সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লন্তীর মাটি গ্রামের মৃত নূরুল হকের ছেলে ও উপজেলার সাদিপুর ইউপির নূরপুর হাফিজিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার সুপার।
সম্প্রতি তাকে কান ধরে ৩০ বার ওঠবস করানোর ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, গত শনিবার আব্দুল কাদির হিফজ বিভাগের এক আবাসিক ছাত্রকে ধর্ষণ করেন। ১১ বছরের ওই শিশু বিষয়টি পরিবারকে জানালে তারা মাদ্রাসা কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে শিশুটিকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাদ্রাসা কমিটি স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে রোববার সালিশ ডাকে। সালিশে তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয় ও শিশুটির চিকিৎসার খরচের জন্য ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আপ্তাব আলী বলেন, ‘সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুচলেকা নিয়ে আব্দুল কাদিরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সালিশের পর তিনি মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংবাদমাধ্যম থেকে আব্দুল কাদিরকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ধরেননি।
ঘটনাটি ওসমানীনগর থানা পুলিশ অবহিত হবার পর ওসমানীনগর থানার এসআই সুবিনয় বৈদ্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে ঘটনার ৪ দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, পুলিশ বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, পুলিশ বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘রোববার রাতে ধর্ষণের খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাসায় পুলিশ পাঠাই। সেখানে ওই শিক্ষক বা ছাত্র কাউকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব ইমাম, মাদ্রাসা শিক্ষক, আলেম-ওলামাদের সম্মান দিচ্ছি তারাই আবার ধর্ষক রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন। তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে এদের কারণেই আমরা মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। মানুষের সামাজিক ও মানসিক বিকৃতি ঘটছে। হতে পারে সেটি মৌলিকভাবে নৈতিকতার অভাবে। যদি এটা শুধু যৌন লালসার কারণে হতো তবে যৌন লালসা পূরণ করেই শেষ হতো। কিন্তু ধর্ষণের পর আবার হত্যা করছে এটা সমাজের প্রতি তার একটা জিঘাংসা।
শিশুদের যৌন নির্যাতন চালানোর একটা বড় কারণ বিকৃত মানসিকতা। যাকে ইংরেজিতে বলে পিডোফেলিয়া। এই বিকারগ্রস্ত মানুষের আত্মায় অসুখ বাসা বেঁধেছে। অসুখ হলে ওষুধ খেলে সেরে যায়। কিন্তু আত্মার অসুখ হলে পেইন কিলার বা অ্যান্টিবায়োটিকেও সারে না। এই অসুখের উৎপত্তি স্থলটাকে উপড়ে ফেলতে হবে। মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের তথ্য সবাই জানে। তারপরও পিতা-মাতা-সন্তানদের পাঠায় ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হুজুরদের কোলে তুলে দিয়ে আসে এই নির্মম বাস্তবতা ভয়াবহ।
তারা বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আজ যারা শিশু, কাল তারাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আজ যারা বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একদিন তারাও শিশু ছিলেন। তাই শিশুদের নিয়ে তাদের রয়েছে নানা ভাবনা। কিন্তু সারাদেশে বিভিন্ন মাদ্রাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছেন কখনো খোদ মাদ্রাসা শিক্ষক তথা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৬
আপনার মতামত জানানঃ