সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ডাইনোসর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আগ্রহের শেষ নেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরও। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের আরেক নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন।
দুই পা, সামনের দিকের ছোট দুই হাত যেন অবিকল ধারালো ছুরি। এশিয়ার বিভিন্ন উপকূলে এমনই ডাইনোসর ঘুরে বেড়াতো ১৫৪ মিলিনয়ন বছর আগে।
সম্প্রতি লাইভ সায়েন্সের সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন ডাইনোসরের জীবাশ্মের খোঁজ পেয়েছেন জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। প্রথম এই জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে এশিয়ার উপকূলে, দাবি মার্কিন ও জাপানের গবেষকদের।খবর এনডিটিভি
গবেষণায় জানানো হয়, জীবাশ্মটি একটি নতুন ডাইনোসরের প্রজাতি, যাকে গবেষকরা প্যারালিথারাইজিনোসরাস জেপোনিসাস নাম বলেছেন।
সমীক্ষা অনুসারে, ডাইনোসরটি থেরিজিনোসর নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত ছিল, দ্বিপদ ও প্রাথমিকভাবে তিন আঙুল বিশিষ্ট তৃণভোজী ডাইনোসর। এদের নখ ধারালো ছুরির মতো। এই দিয়েই এরা গাছপালা কাটা ও পশু শিকার করতো।
লাইভ সায়েন্সের গবেষক রয় এম হাফিংটন বলেছেন, ‘এই ধারালো নখকে প্যারালিথারাইজিনোসরাস জেপোনিসাস খাদ্য অনুসন্ধানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো, আগ্রাসনের মাধ্যম হিসেবে নয়। তাছাড়া ঝোপঝাড় ও গাছকে খাবারের জন্য তার মুখে তুলে নিতো।
ডাইনোসরটি থেরিজিনোসর নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত ছিল, দ্বিপদ ও প্রাথমিকভাবে তিন আঙুল বিশিষ্ট তৃণভোজী ডাইনোসর। এদের নখ ধারালো ছুরির মতো। এই দিয়েই এরা গাছপালা কাটা ও পশু শিকার করতো।
মূলত ২০০৮ সালে জাপানের হোক্কাইডোতে এই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল। গবেষকদের আরেকটি দল খুঁজে পেয়েছিল সেটি। আবিষ্কারের সময়, জীবাশ্মটি একটি কংক্রিটে মোড়ানো ছিল, শক্ত হয়ে যাওয়া খনিজের মতো। আগে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে এটি টেরিজিনোসরাসের অন্তর্গত।
কিন্তু তার প্রমাণ না মেলায় ফের গবেষণা শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা আবার জীবাশ্মটি দেখার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে, নতুন গবেষণার লেখকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে জীবাশ্মটি একটি টেরিজিনোসরাসের অন্তর্গত। শুধুমাত্র নমুনার ওপর ভিত্তি করে, টেরিজিনোসর কত বড় ছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা অসম্ভব। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ডাইনোসরটি বড় ছিল, প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারতো ও ৩ টন পর্যন্ত ওজন হতো সেগুলো।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
২৩১ থেকে ২৪৩ মিলিয়ন (২৩.১-২৪.৩ কোটি) বছরের মধ্যে ডাইনোসরের প্রথম আবির্ভাব। ১৭.৭ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে এদের বিচরণ ছিল। পাখিসদৃশ ডাইনোসর ছাড়া ৬ কোটি ৫৫ লাখ বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে পুরো একমত নন। কিন্তু এই বিলুপ্তির পেছনে উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতকে বেশ বড় করে দেখা হয়। এ ছাড়া অগ্ন্যুত্পাত থেকে রাসায়নিক নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কারণগুলোও বিবেচনা করা হয়।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৬
আপনার মতামত জানানঃ