মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর চতুর্থ দেশ হিসেবে এবার যোগ দিতে যাচ্ছে আরব লিগ সদস্য মরক্কো। গত আগস্টের পর থেকে মরক্কো হলো চতুর্থ রাষ্ট্র, যারা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তিতে এলো। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং সুদান এ ধরণের চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। অন্যদিকে মিসর ও জর্ডানের পর মরক্কো হলো আরব লীগের ষষ্ঠ সদস্য, যারা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলো বলে বিবিসি সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার এক টুইটে নতুন এ খবরটি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাকে ইরানের প্রভাব মোকাবেলায় রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে আঞ্চলিক সমর্থন বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ মুহূর্তের কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মরক্কো জানিয়েছে যে, তারা ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন করছে। তবে এই চুক্তির নেপথ্যে মরক্কোর কি পাচ্ছে তা পরিস্কার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা এক টুইট থেকে। চুক্তি অনুযায়ী, বিরোধপূর্ণ পশ্চিম সাহারা অঞ্চলের ওপর মরক্কোর যে দাবি, তাকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অঞ্চল নিয়ে মরক্কো এবং আলজেরিয়া সমর্থিত পলিসারিও ফ্রন্টের মধ্যে বিরোধ চলছে। পলিসারিও ফ্রন্ট সেখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
ট্রাম্প টুইটারে লেখেন, ‘আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের দুই মহান বন্ধু ইসরাইল ও মরক্কো পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে একমত হয়েছে – মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রযাত্রা।’ চুক্তি অনুযায়ী, ২০০০ সালে তেল আবিব ও রাবাতে বন্ধ করে দেয়া দুই দেশের লিয়াজো অফিসগুলো পুনরায় চালু করা হবে। কর্মকর্তারা বলছেন যে, মরক্কো ইসরাইলিদের জন্য সরাসরি বিমান চলাচলের অনুমোদন দেবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তিকে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে তিনি মরক্কোর বাদশাহকে ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে, মরক্কোর বাদশাহর প্রাসাদ থেকে দেয়া বিবৃতিতে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয় যে টেলিফোনে মিস্টার ট্রাম্পের সাথে আলোচনার সময় সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাদশাহ সম্মতি দিয়েছেন।
মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন এই তিন আরব দেশ মরক্কো এবং ইসরাইলের মধ্যকার চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা চুক্তির সমালোচনা করে বলেছেন যে এই পদক্ষেপ তাদের অধিকার হরণে ইসরাইলকে আরও উৎসাহিত করবে।
এদিকে ইরানের পার্স নিউজ সূত্রে জানা যায়, ইসরাইল ও মরক্কোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সৌদি আরব। আমেরিকার মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার ওই চুক্তি হয়। একটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরাইলের চ্যানেল-১২ শুক্রবার জানায়, এ চুক্তিতে রিয়াদ জড়িত ছিল। সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠ একটি বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা মরক্কো ও ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় ছেপেছে। পত্রিকাটির এমন নিউজ ট্রিটমেন্টের ঘটনাকে ইসরাইল-মরক্কো চুক্তির প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইসরাইলের চ্যানেল-১৩ জানিয়েছে, আমেরিকার বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি আরব একসঙ্গে কাজ করছে যাতে আরো কয়েকটি দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করে। রিপোর্টে ধারণা দেয়া হয়েছে, ওমান ও ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে সম্ভাব্য দুই দেশ যারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।
এটিকে ঐতিহাসিক চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মরক্কোর বাদশাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ইসরাইল ও মরক্কোর জনগণ আধুনিক জমানায় এক উষ্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
আপনার মতামত জানানঃ