ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ এলাকায় দখলদার বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। পূর্বঘোষিত পতাকা মিছিল নিয়ে গতকাল রোববার জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন ইসরায়েলের হাজারো উগ্র ডানপন্থী ইহুদি। সেই সঙ্গে পতাকা মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদারে দখল করা পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় তিন হাজার সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। এর জেরে সেখানে ইসরায়েলি পুলিশ ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজনা ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি পুলিশ ও কট্টর ইহুদিদের নতুন করে বড় ধরনের সংঘাত শুরুর আশঙ্কা করছেন অনেকেই। খবর রয়টার্স ও আল–জাজিরার।
১৯৬৭ সালের আরবযুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখল উপলক্ষ্যে ইসরায়েলের জেরুজালেম দিবসে প্রতি বছর এ পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনিরা এর বিরোধিতা করলেও ইসরায়েল পুরো জেরুজালেমকে এর রাজধানী হিসেবে দাবি করে।
অতীতে ইসরায়েলের জেরুজালেম দিবস উপলক্ষ্যে বার্ষিক এ কুচকাওয়াজটি করা হলেও বর্তমানে তা ক্রমবর্ধমানভাবে ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের শক্তি প্রদর্শনে পরিণত হয়েছে। জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে একটি বিশাল ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠি বসবাস করলেও শহরটিতে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চায় ইহুদি জাতীয়তাবাদীরা। এ পতাকা মিছিলের জেরে সেখানে ইসরায়েলি পুলিশ ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজনা ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি পুলিশ ও কট্টর ইহুদিদের নতুন করে বড় ধরনের সংঘাত শুরুর আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
পুলিশ জানিয়েছে, পতাকা মিছিলের আগে রেকর্ড দুই হাজার ৬০০ ইহুদি আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিল। সেটি বন্ধ করতে ফিলিস্তিনিরা পাথর নিক্ষেপ করে ও আতশবাজি ফেলে। পরে পুলিশ স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কিছু ইহুদি ধর্মীয় পোশাক পরে আল-আকসা প্রাঙ্গণে উপাসনা করতে চায়। এ ছাড়া কিছু ইসরায়েলি পতাকা উড়িয়ে সেখানে জাতীয় সংগীত গাইতে থাকে।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি জনগন মিছিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ইসরায়েলি পতাকা পুড়িয়েছে। এ সময় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয় ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
আল-আকসার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ও মসজিদটির প্রচারক শায়েখ ইকরিমা সাবরি ইসরায়েলিদের এমন আচরণের নিন্দা করেছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘আল-আকসা মসজিদে আজ যা ঘটেছে, তা ১৯৬৭ সাল থেকে ঘটেনি।’
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি পুলিশ মুসল্লিদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়েছে। ১৮ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। সাংবাদিকদের আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি পুলিশ এবং পতাকা মিছিলে অংশ নেওয়া ইহুদিরা।
সংঘর্ষের বিষয়ে ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, অল্প কয়েকজন ফিলিস্তিনি আল-আকসা প্রাঙ্গণে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ ও মিছিলকারীদের পথ রোধ করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদিদের প্রার্থনায় অংশ নেওয়া ইসরায়েলের দায়িত্বহীন নীতির ফলাফল। এর ফলে কিছু ঘটলে ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইহুদি মিছিলে অনেক তরুণ-যুবক অংশ নিয়েছেন। তাদের হাতে ইসরায়েলের পতাকা রয়েছে। তারা আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাঈম রয়টার্সকে বলেন, দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদিদের প্রার্থনায় অংশ নেওয়া ইসরায়েলের দায়িত্বহীন নীতির ফলাফল। এর ফলে কিছু ঘটলে ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
গত বছর ইহুদি মিছিলে হামাসের রকেট হামলার ফলে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত শুরু হয়েছিল। পরে তা ১১ দিনের যুদ্ধে গড়ায়। এতে গাজায় নারী, শিশুসহ অন্তত ২৫০ জন নিহত হন। ইসরায়েলি ১৩ জনের প্রাণ যায় ওই যুদ্ধে। এই ঘটনা মাথায় রেখে এবারও নতুন করে সংঘাত শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।
মুসলিম ও ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীদের কাছেই ঐতিহাসিকভাবে আল আকসা মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। মুসলিমদের জন্য পবিত্র আল আকসা মসজিদটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। আর মসজিদ চত্বর মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবে পরিচিত।
অবশ্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। আর সেটি নিয়েই বহু যুগ ধরে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বন্দ্ব। ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচাইতে পবিত্র স্থান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৩
আপনার মতামত জানানঃ