একটি মহল বরাবরই শান্তিময় সমাজকে অশান্ত করে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে তারা থাকে সদা তৎপর। কয়েকদিন ধরে ভারতের কট্টরপন্থিরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে উঠে পরে মাঠে নেমেছে। বিভিন্ন সময় ধর্মকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল ও সুযোগসন্ধানী একটি চক্র বরাবরই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালায়। সম্প্রতি একই অবস্থা লক্ষ্য করা যায় ভারতে।
ভারতের ৪ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে। এই রাজ্যগুলো হলো গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ। ইতোমধ্যে গুজরাটের সংঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব রাম নবমী উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিছিল থেকে এই দাঙ্গার সূত্রপাত।
মধ্যপ্রদেশের অতিরিক্ত কালেক্টর এস এস মুজালদে এনডিটিভিকে বলেন, সোমবার সকালে মধ্যপ্রদেশের খারগাঁও শহরের তালেব চক এলাকায় রাম নবমীর মিছিলে লাউড স্পিকারে গান বাজানো নিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে কলহ শুরু হয় মিছিলকারীদের। এক পর্যায়ে এই কলহ সংঘাত ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়।
কয়েকটি ভিডিও ফুটেজের চিত্রে দেখা দেখা গেছে, দু-পক্ষই পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ছেন, কয়েকটি যানবহনে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং দাঙ্গাকারীদের শান্ত করতে টিয়ার শেল ছুড়ছেন পুলিশ সদস্যরা।
ভারতের ৪ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে। এই রাজ্যগুলো হলো গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ। ইতোমধ্যে গুজরাটের সংঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
এস এস মুজালদে জানান, বিক্ষুব্ধদের ইটপাটকেলের আঘাতে মধ্যপ্রদেশের খারগাঁও শহরের পুলিশ প্রধান সিদ্ধার্থ চৌধুরিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া তালেব চকে তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও একটি মন্দিরে ভাঙচুর চালিয়েছে দাঙ্গাকারীরা।
‘পরিস্থিতি শান্ত করতে খারগাঁওয়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে, পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে,’— এনডিটিভিকে বলেন এস এস মুজালদে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আনন্দ জেলার খামভাত ও সবরকণ্ঠ জেলার হিমন্তনগরেও রামনবমী মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। খামভাত শহরের পুলিশ প্রধান অজিত রাজইয়ান ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআইকে জানান, খামভাতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত চলার সময় ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তবে নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
হিমন্তনগরেও রামনবমীর মিছিলে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পিটিআই। সবরকণ্ঠ জেলার পুলিশ প্রধান বিশাল বাঘেলা বলেন, মিছিলে ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে দাঙ্গার সূত্রপাত এবং শহরের কয়েকটি দোকান ও যানবাহন ভাঙচুর করেছে দাঙ্গাকারীরা।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা জেলাতে রাম নবমীর মিছিলে ইট পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েক জন আহতও হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গেও রামনবমীর মিছিলে সংঘাত হয়েছে। তবে এই সংঘাত হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে নয়, হয়েছে বিজেপি ও পুলিশের মধ্যে। হাওড়ার শিবপুরে রাম নবমী উপলক্ষ্যে বিজেপির মিছিলে পুলিশ ব্যাপকভাবে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে এনডিটিভিকে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির গৌরব অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার কলঙ্ক— এ দুইয়ের মধ্যে কোনটিকে ভারতের নেতৃবৃন্দ বেছে নেবেন, তা তাদেরই ঠিক করতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে কখনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের সহাবস্থান হতে পারে না। একটি দেশ শুধু আকার-আয়তনে ও জনসংখ্যার আধিক্যের বিচারেই বড় হয়ে উঠতে পারে না। বড় দেশ বলে পরিচিত হতে হলে মন-মানসিকতার ক্ষেত্রে ও বড় হতে হবে। এজন্য মানবিকতা ও বিশ্বজনীনতার চর্চা বাড়াতে হবে, আকারের বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়মিত নির্বাচনের নীতি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও জাত-পাতের বৈষম্যের কারণে ভারতের এখনও প্রকৃত সভ্য দেশ হিসেবে পরিগণিত হওয়ার অনেক বাকি, এ নির্মম সত্যটা ভারতীয় নেতৃবৃন্দের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৮
আপনার মতামত জানানঃ