রাশিয়ার সমর্থন পাওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে মর্টার হামলার অভিযোগ তুলেছে। বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী বাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় চারবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে গ্রুপটি।
স্বঘোষিত লুহানস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিদের দ্বারা জারি করা এক বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এমন একটি সংগঠনের নাম অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)।
তাদের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া পওয়া যায়নি। সূত্র মতে, ন্যাটের সদস্য হিসাবে কিয়েভকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানিয়ে এক লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছিলো রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে যে, পশ্চিম সামরিক জেলায় প্রশিক্ষণ শেষে সরঞ্জাম নিয়ে স্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে রুশ সৈন্যরা।
ইউক্রেন বলেছে যে তারা এর কোনো প্রমাণ দেখেনি। একই অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রেরও। দেশটি বলেছে যে রাশিয়া আসলে সৈন্য উপস্থিতি বাড়িয়েছে বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।
স্যাটেলাইট ইমেজে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার না করার প্রমাণ
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কিছু সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। তবে তার একদিনের মাথায় গতকাল বুধবার ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ জানিয়েছেন, বাস্তবে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেনি রাশিয়া। স্যাটেলাইট ইমেজে এর প্রমাণ মিলেছে।
ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করছি তা প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটের উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমেও উন্মুক্ত সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।’
রাশিয়ার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কিছু সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় অবশ্য এমনিতেও আশ্বস্ত হতে পারেনি পশ্চিমা দুনিয়া। তার মধ্যেই স্যাটেলাইট ইমেজের এই তথ্য সামনে তুলে ধরলেন জেন্স স্টোলটেনবার্গ।
তিনি বলেন, আমরা সর্বোত্তম ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ইউরোপে যেকোনও সংঘাত এড়াতে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারই হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ। তবে রাশিয়া ইউক্রেনে ফের আগ্রাসী আচরণ করলে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘ইউরোপের জন্য রুশ হুমকি একটি নতুন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। তবে ন্যাটো শুধু একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট। আমরা কোনও হুমকি নই, আমরা সংলাপের জন্য প্রস্তুত।’
বিশ্বকে বিভ্রান্ত করছে রাশিয়া?
ইউক্রেন সীমান্ত সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকে বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ করেছে ন্যাটো জোট। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোটটির দাবি সেনা প্রত্যাহারের বদলে নতুন করে আরও সাত হাজার সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার জোটটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নতুন সেনাসমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জোরালো করেছে মস্কো।
এদিকে নিজেদের দাবির সমর্থনে রুশ প্রতিরক্ষা দফতরের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, রেলওয়ের খোলা ওয়াগনে কিছু ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যান তোলা হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সামরিক যানের বহর ক্রিমিয়ার সেতু পার হয়ে চলে যাচ্ছে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনার কথা সবসময়ই প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বলেছেন যে রাশিয়া ইউরোপে আরো একটি যুদ্ধ চায় না।
গত নভেম্বর মাসে ইউক্রেনের সীমান্তে রুশ সৈন্য মোতায়েন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গতকাল বুধবার রাশিয়া ঘোষণা করে মস্কোর দখল করে নেওয়া ক্রাইমিয়াতে তাদের সামরিক মহড়া শেষ হয়েছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৌশলগত অনুশীলনে অংশগ্রহণ শেষ করে সৈন্যরা তাদের স্থায়ী ঘাঁটিতে চলে যাচ্ছে। তবে কতো সৈন্য ফেরত যাচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যে সীমান্ত থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করছে, এমন কোনও কিছু তিনি এখনও দেখেননি। তিনি বলেন, যখন এ রকম কোনও সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে, তখন সেটা সবার চোখে ধরা পড়ার কথা।
সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে রাশিয়ার বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় রাশিয়া তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে। এতোদিন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছিল যে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে দেশটির সীমান্তে এক লাখের মতো রুশ সেনা জড়ো করা হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখন বলছেন, সীমান্তে দেড় লাখ রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এখনও জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। যদি সে রকম কিছু হয় তাহলে তার মানবিক মূল্য হবে অনেক বেশি।
এই সপ্তাহে রাশিয়া বেশ কয়েকবার কিছু সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তা খতিয়ে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে পশ্চিমা নেতারা দ্রুতই রুশ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা শুরু করেন। বৃহস্পতিবার ন্যাটো জোট আবারও রুশ দাবি প্রত্যাখ্যান করে সতর্ক করে বলেছেন, আগ্রাসনের জবাব দিতে তারা প্রস্তুত।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘এই ব্যাপক সেনাসমাবেশ-রাশিয়ার স্থল বাহিনীর প্রায় ৬০শতাংশ সেনা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমানায় জড়ো করার বিপরীত প্রতিক্রিয়া পেতে হবে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ