১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের কেন্দ্র সিডিসি সর্বপ্রথম এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন।
বিশ্বব্যাপী এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি (৩৫ মিলিয়ন) মানুষ মারা গেছে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বব্যাপী আরও তিন কোটি সত্তর লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। আর প্রতি বছর নতুন করে আরও ১৮ লাখের মতো মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মরণব্যাধি খ্যাত এই রোগ থেকে এবার লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত এক মার্কিন নারী স্টেম সেল পরিবর্তন করে সুস্থ হয়েছেন। ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার গবেষকরা জানিয়েছেন, এইডস রোগের জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত এক দাতার কাছ থেকে স্টেম সেল পাওয়া এই নারী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট তিন ব্যক্তি স্টেম সেল পরিবর্তনের মাধ্যমে এই মারণ ভাইরাস থেকে মুক্তি পেলেন।
মঙ্গলবার মার্কিন শহর ডেনভারে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে ওই নারীর সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা প্রকাশ করা হয়। মধ্য বয়সী এই নারী ১৪ মাস ধরে এইচআইভি ভাইরাসমুক্ত রয়েছেন।
ওই নারী তীব্র মাইলয়েড লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এটি এমন একটি ক্যানসার, যা অস্থি মজ্জার রক্ত গঠনকারী কোষে শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য নাভীর রক্ত গ্রহণ করার পর থেকে ওই নারী ১৪ মাস ধরে ভাইরাসমুক্ত ছিলেন।
এমনকি এ সময় তাকে কোনও অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপিও নিতে হয়নি। এই শক্তিশালী থেরাপি এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
তবে নারী হিসেবে প্রথম হলেও এই সাফল্য কিন্তু প্রথম হলো না। এর আগেও দুই জন পুরুষ স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে এইচআইভিমুক্ত হয়েছেন। তাই আগেও এই বিষয়ে সাফল্য এসেছে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক এইডস সোসাইটির সভাপতি শ্যারন লিউইন বলেন, এই নিয়ে তৃতীয়বার এই চিকিৎসার মধ্যমে এইচআইভি থেকে সেরে ওঠা সম্ভব হলো। নারীদের ক্ষেত্রে এটাই প্রথমবার।
এই সাফল্য এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বড় এক গবেষণার ফসল হিসেবে। গবেষণাটি চালিয়েছেন ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের ডা. উবোনে ব্র্যাসন এবং জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. দেবরা পারসদ।
এই দুই বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে ২৫ জন এইচআইভি আক্রান্তের কর্ড ব্লাডের মাধ্যমে স্টেম সেল থেরাপি করা হয়। এক্ষেত্রে ক্যানসারসহ এইচআইভির চিকিৎসাতেও এর বিশেষ ফল মেলে।
এক্ষেত্রে রোগীদের প্রথমত কেমোথেরাপির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই থেরাপির মাধ্যমে শরীরের ক্যানসার কোষ মরে যায়। এরপর চিকিৎসকরা রোগীর স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন। এক্ষেত্রে ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশনও মাথায় রাখা হয়।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই মানুষগুলোর শরীরে তৈরি হয় এক ধরনের ইমিউনিটি। এই ইমিউনিটি এইচআইভি থেকে রক্ষা করে।
শ্যারন লিউইন বলেন, ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে এর মাধ্যমে যে এইচআইভি সারানো যেতে পারে এটা পরিষ্কার। তাই আগামী দিনে আরও রাস্তা খুঁজে নিয়ে এই চিকিৎসার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ