মানুষ মানুষকে মেরে ফেলছে, প্রকাশ্যে কোপাচ্ছে এমন দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখি। কিন্তু মানুষকে মেরে তার মাংস খাচ্ছে অন্য মানুষ এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা। রুপকথায় নরভক্ষণের গল্প থাকলেও বাস্তবেও কিন্তু নরভক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আর তারা হলো নিয়ান্ডারথাল।
নিয়ান্ডারথালরা তাদের প্রজাতির অন্য মানুষের মাংস রান্না করে খেয়েছে। নিয়ান্ডারথালরা হচ্ছে আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সের মতো প্রায় একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ।
তবে আজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার বছর আগেই এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে তারা। আমরা (হোমো স্যাপিয়েন্স) মানুষরাই তাদের এই পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করেছি। যদিও পৃথিবী থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পেছনে আরো অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
নিয়ান্ডারথালরা যে নিজ প্রজাতির মাংস খেতো তার প্রমাণ মিলেছে বেলজিয়ামের গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত মানুষের হাড়ে। সে সময় নিয়ান্ডারথালরা শুধুমাত্র ঘোড়া আর হরিণ খেয়েই বেঁচে থাকতো না, মানুষের মাংসও খেতো।
গবেষকরা সেই গুহা থেকে ৪০ হাজার বছর আগের যে হাড় পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে সদ্যোজাত বাচ্চা, শিশু, তরুণ এবং বয়স্ক মানুষের হাড়।
এসব হাড় বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, নিয়ান্ডারথালরা নিজ প্রজাতির মাংস খেতো। এই হাড়গুলো ঠিক সেই সময়ের যে সময় নিয়ান্ডারথালরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে এবং হোমো স্যাপিয়েন্সরা (বর্তমান মানুষ) তাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, নিয়ান্ডারথালরা বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলো। ধ্বংসের পথে এসেও তারা তাদের মৃতদেহের দেখভাল করতো এবং দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতো। কিন্তু মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলে তারা মৃতদেহে খেয়ে ফেলতে শুরু করে।
সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী হেলেন রুশিয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক টিম গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত নিয়ান্ডারথালদের হাড় নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন। তাদের গবেষণায়ও নরভক্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
এ বিষয়ে ক্রিস্টিয়ান ক্যাসিয়াস বলেন, হাড়গুলোতে কেটে ফেলার চিহ্ন রয়েছে। সে হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নিয়ান্ডারথালরা হাড়গুলো এমনভাবে ভেঙেছে যেভাবে তারা ঘোড়া এবং হরিণের হাড় ভাঙতো।
এমনভাবে মাংস বিচ্ছিন্ন করেছে যেভাবে ঘোড়া এবং হরিণের মাংস বিচ্ছিন্ন করতো হাড় থেকে। কিন্তু তারা ঠিক কী কারণে নিজেদের মাংস খেতো সেটা এখনো রহস্যের বিষয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ