বছরসেরা দুর্নীতিবাজদের তালিকা করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক বৈশ্বিক অলাভজনক সংস্থা অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (ওসিসিপিআর)। বছরজুড়ে বিশ্বনেতাদের কর্মকাণ্ডের ভিত্তেতে বুধবার ২০২১ সালের এসব দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এই তালিকার এক নম্বরে আছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। সরকারি তহবিলের অর্থ তছরুপের জন্য বছরজুড়েই তিনি আলোচিত ছিলেন। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন আগস্টে তালিবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এর পর তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণের গুরুতর অভিযোগে অস্ট্রিয়ার সাবেক চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ রয়েছেন দুর্নীতিবাজদের তালিকার পঞ্চম অবস্থানে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনাভিত্তিক সংগঠন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ‘বর্ষসেরা’ দুর্নীতিবাজের এ তালিকা করেছে। এটি দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কাজের তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত। ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ওসিসিআরপি বলেছে, তারা ও তাদের অংশীদার সংগঠনের অনুসন্ধানী সাংবাদিক, সম্পাদক এবং পাঠক ও দর্শকদের কাছ থেকে ২০২১ সালে সংগঠিত অপরাধ ও দুর্নীতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের নাম চাওয়া হয়েছিল। তাতে জমা পড়ে ১ হাজার ১৬৭ জনের নাম। সেখান থেকে যাচাই–বাছাই শেষে লুকাশেঙ্কোকে ‘বর্ষসেরা’ দুর্নীতিবাজ হিসেবে ঘোষণা করেন ওসিসিআরপির ছয় সদস্যের বিচারক প্যানেল।
এবারের তালিকা তৈরিতে যুক্ত ছিল ৬ জন জুরির একটি প্যানেল। তারা হলেন- আরব রিপোটার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের (আরিজ) রাওয়ান দামেন, ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেশন জার্নালিস্টের (আইসিআইজে) জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদন উইল ফিটজগিবন, পুলিৎজার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক বোয়োউং লিম, জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক লুইস শেলি, পুরস্কারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক পল রাদু ও ড্রিউ সুলিভান।
তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন আগস্টে তালিবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এর পর তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
বিদায়ী বছরজুড়ে লুকাশেঙ্কো ও তার পরিবারের সদস্যরা সরকারি তহবিলের অর্থ তছরুপের জন্য আলোচিত ছিলেন বলে জানিয়েছে ওসিসিআরপি। এ ছাড়া গত মে মাসে গ্রিসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ায় যাওয়ার পথে বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অমান্য করে রায়ানএয়ারের একটি ফ্লাইট বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ঘুরিয়ে নেয় বেলারুশের নিরাপত্তা বাহিনী। মিনস্কের বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরপরই ফ্লাইটের যাত্রী ও বেলারুশ সরকারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচ ও তার বান্ধবী সোফিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় তুমুল সমালোচিত হন লুকাশেঙ্কো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সীমান্ত নিয়েও বিরোধে জড়ান লুকাশেঙ্কো। বেলারুশ সীমান্তে পশ্চিম ইউরোপগামী অভিবাসীদের চরম ভোগান্তির পেছনেও তাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। ভিন্নমতের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর দমন–পীড়ন চালানো, দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত তথ্য লুকানো ও ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে। ৬৭ বছরের লুকাশেঙ্কো ১৯৯৩ সাল থেকে বেলারুশের ক্ষমতায় রয়েছেন।
এদিকে গত ১৫ আগস্ট তালিবানের কাবুল দখলের পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা তল্পিতল্পা গুটিয়ে রীতিমতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গনির বিষয়ে ওসিসিআরপির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্রিউ সুলিভান বলেন, ‘এই আফগান নেতা রীতিমতো পুরস্কার জিততে পারেন। তিনি যে শুধু দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন তা–ই নয়; বরং নিজ দেশের মানুষকে দুর্দশা ও মৃত্যুর মুখে রেখে বিদেশেও পালিয়েছেন।’
ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে বলা হয়, বাশার আল–আসাদ সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে তিনি দেশটির কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে চীনা তহবিল ব্যবহার করে ইরান থেকে জ্বালানি তেল কেনার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ ছাড়া তার জামাতার বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী থাকার সময় আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রমাণ রয়েছে।
সেবাস্টিয়ান কুর্জসের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, সুইজারল্যান্ড সরকার, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টস (আইসিএফজে), গুগল আইডিয়াস এবং ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনস (ওএসএফ) ওসিসিআরপিতে অর্থায়ন করে থাকে। ২০০৬ সালে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি ২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান প্রেস প্রাইস অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।
২০২০ সালে ওসিসিআরপির ‘বর্ষসেরা’ দুর্নীতিবাজের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। এর আগের বছর শীর্ষে ছিলেন মাল্টার সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ মাসকট। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে ২০১৭ সালে ও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো ২০১৬ সালে তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। বর্ষসেরা দুর্নীতিবাজ ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও, সেটা ২০১৪ সালের তালিকায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৩
আপনার মতামত জানানঃ