তৃতীয় ধাপে ৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের পর চতুর্থ ধাপেও ৯৮টি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির নেতারা। তৃতীয় ধাপের তুলনায় চতুর্থ ধাপে ভোট হওয়া ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল কম। সে হিসাবে বিএনপির নেতারা তৃতীয় ধাপের তুলনায় এবার আরও বেশি ভালো করেছেন। যদিও ইউপি নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোট বর্জন করছে বিএনপি। তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন।
তবে নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। আর তাতেই আসছে সাফল্য। এই বিজয়ী নেতারা ধানের শীষের বদলে ভোট করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আবার সব ইউনিয়নে বিএনপির এই ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা’ ছিলও না। মোট কতগুলো ইউনিয়নে ছিল, সেটি জানাও সম্ভব নয় তাদের এই কৌশলের কারণে।
গত রোববার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট শেষে যে ৭৮১টি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তাতে দেখা যায়, বিএনপির এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেলা হিসেবে সবচেয়ে ভালো করেছেন নওগাঁয়। এমনকি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরেও চমক দেখিয়েছেন তারা।
বিভাগওয়ারি হিসাব করলে দেখা যায় স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভালো করেছেন রাজশাহীতে। উত্তরের আরেক বিভাগ রংপুরেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা ইউনিয়নে জিতে এসেছেন।
বিএনপির প্রার্থীরা তৃতীয় সর্বোচ্চ ইউনিয়নে জিতেছেন ঢাকা বিভাগে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে সমানসংখ্যক ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন তারা। তবে ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম।
বিএনপির নতুন কৌশল
গত কয়েক বছরে বিএনপি জাতীয় ও স্থানীয় যেসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়েছে, তাতে তারা ভালো ফল করতে পারেনি। দলটির পক্ষ থেকে অবশ্য ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের সমর্থকদের ভোট দিতে দেয়া হয় না, প্রচারেও বাধা দেয়া হয়।
চলতি বছর পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার পর বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের কোনো প্রার্থী নেই।
তবে গত ২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, বিএনপি আসলে এই নির্বাচন থেকে একেবারে দূরে নেই।
সেদিন ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’
বিএনপির স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে চ্যালেঞ্জ করছেন বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।
২০১২ সালে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৈমূরকে সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি। দলীয় প্রতীক ছাড়া ওই নির্বাচনে ভোটের আগের দিন তিনি সরে দাঁড়ান দৃশ্যত কোনো জোরালো অভিযোগ ছাড়াই। ধারণা করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে হারাতে একই দলের নেতা আইভীকে সুবিধা করে দিতেই তিনি এই কাজ করেছিলেন। ১০ বছর পর এসে আইভীর নৌকা ডোবাতে তৈমূর নেমেছেন হাতি প্রতীক নিয়ে।
বিএনপি দলীয় প্রতীক না নিলেও একই জেলায় দলের সব প্রার্থী একই ধরনের প্রতীক নিয়ে লড়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন নওগাঁয় ২৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে বিএনপির নেতারা আনারস আর ৬টিতে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ভোট করেছেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলাতে বিএনপির বিজয়ী তিন নেতাই লড়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। আরও একাধিক জেলায় বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের অনেকেই জিতেছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।
বিএনপির উত্থান নাকি আ’লীগের আই ওয়াশ?
রোববার নওগাঁয় ভোট হয়েছে মোট ২৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন ১১টি ইউনিয়নে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নেতারা জিতেছেন ১০টিতে।
নওগাঁ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনিও এই ফলাফলে কিছুটা অবাক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কিছু স্থানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের একটি রাজনৈতিক পলিসি। তারা বোঝাতে চাচ্ছে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে।’
জেলার ২৬টি ইউনিয়নেই বিএনপির এই কৌশলী প্রার্থী ছিল। স্বতন্ত্র পরিচয়ের বদলে যদি নেতারা ধানের শীষ নিয়ে অংশ নিতেন, তাহলে তৃণমূলের সমর্থকদের ভোট পেয়ে আরও বেশি ইউনিয়নে জিততে পারতেন কি না- এমন প্রশ্নে সনি বলেন, ‘আমি তো বললাম, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হওয়াটা আওয়ামী লীগের আই ওয়াশ।’
তিনি বলেন, ‘যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো এবং ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীরা দেশের সব ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত, তবে বিএনপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে অবশ্যই বেশি এগিয়ে থাকত।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪০
আপনার মতামত জানানঃ