আফগানিস্তানে বিয়ের অনুষ্ঠানে গান বাজানোয় গুলি চালিয়েছে তালিবান সদস্যরা। এতে বিয়েবাড়ির দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে দেশটির নানগারহার প্রদেশে এ ঘটনা ঘটে। আফগান বার্তা সংস্থা ‘আভা’-এর বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ওই এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে কয়েকশো মানুষ অংশ নেন। তালিবান সদস্যদের কাছ থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান করার অনুমতিও নেওয়া হয়। তারা বিয়েতে নিয়ম মেনে গান বাজানোর অনুমতিও দেয়।
তবে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর একদল তালিবান সদস্য সেখানে হাজির হয়। তারা কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই বিয়ে বাড়িতে আসা লোকজনের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত এক ব্যক্তির আত্মীয় জানান, নানগারহার প্রদেশের সরখরুদ এলাকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গান শোনার সময় তালিবান যোদ্ধারা গুলি ছুঁড়লে ওই দুজন নিহত ও আরও দুজন আহত হন।
ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকজন তরুণ পৃথক একটি কক্ষে গান বাজাচ্ছিলেন। এ সময় তিনজন তালিবান যোদ্ধা এসে তাদের ওপর গুলি ছোঁড়ে। আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় নেতা বলেছেন, গতকাল শুক্রবার তাদের এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে অনেকেই অংশ নেন। তালিবান প্রথমে বিয়েতে মিউজিক বাজানোর অনুমতি দেয়। কিন্তু কিছু সময় পর তাদের একদল সদস্য সেখানে উপস্থিত হয় এবং গুলি চালায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নানগারহার প্রদেশের তালিবানের গর্ভনরের মুখপাত্র কাজী মোহাম্মদ আবেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি। হামলার সঙ্গে জড়িত দুজনকে আইনি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে তালিবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, তিনি ওই ঘটনার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। তবে সংগীতপ্রেমীদের হত্যা করা তালিবানের নীতিবিরুদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ওই ঘটনায় তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত নিশ্চিত নয় যে সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে কী না তাও জানা যায়নি।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসলামী আমিরাতের কাউকে সংগীত বা যে কোনো কিছু থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। শুধু তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। এটাই প্রধান উপায়।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি নিজে থেকে কাউকে হত্যা করে, এমনকি তারা যদি আমাদের কর্মীও হয়, সেটা অপরাধ। আমরা তাদের আদালতে হাজির করব এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
তালিবানের প্রথম দফার শাসনামলে আফগানিস্তানে সংগীত নিষিদ্ধ ছিল। তবে চলতি বছরের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা দেয়নি তালিবান। তবে তালিবানের নেতৃস্থানীয়রা এখনো ইসলামী আইনের লঙ্ঘন মনে করে বিনোদনকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না।
গত ১৫ আগস্ট তালিবান আফগানিস্তান দখলে নেওয়ার পর দেশটির অসংখ্য গায়ক-বাদক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন এবং তার গানের যন্ত্র লুকিয়ে ফেলেছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১১২৬
আপনার মতামত জানানঃ