সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের করপোরেট নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। এখন থেকে ফেসবুক ইনকরপোরেশনের নতুন নাম হবে ‘মেটা’। তবে, স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির অধিনে থাকা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাপের নামে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি বর্তমানে যা করছে তার ‘পরিধি’ আরও উন্নত করবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাইরে ভার্চ্যুয়াল রিয়ালিটির (ভিআর) দিকে এর বিস্তৃতি ঘটাবে।
ফেসবুকের নাম বদল হতে পারে, এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই একটা আলোচনা চলছিল। কিন্তু কী নাম রাখা হবে তা নিয়ে কখনোই প্রকাশ্যে কিছু বলেনি জাকারবার্গের সংস্থা। তবে নেটমাধ্যমে আটকে না থেকে তার পাশাপাশি নানা পরিসরে ফেসবুকের বিস্তারের ভাবনাচিন্তা চালাচ্ছিলেন জাকারবার্গ। ভার্চ্যুয়াল রিয়ালিটি বা অধিবাস্তব নিয়ে কাজ করার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও ফেসবুকের নাম যে ‘মেটাভার্স’ই হতে চলেছে সেটা কেউ আঁচ করতে পারেননি। অবশেষে সেই নামই রাখা হলো ফেসবুকের।
সাবেক এক কর্মীর মাধ্যমে ফেসবুকের কিছু গোপন নথি ফাঁসের ভিত্তিতে ধারাবাহিক নেতিবাচক খবরের পর নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ফেসবুক।
ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ ‘মেটাভার্স’ তৈরির পরিকল্পনার কথা প্রকাশের সময় প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, মেটাভার্স হবে এমন একটি অনলাইন জগৎ, যেখানে মানুষ ভিআর হেডসেট পরে ভার্চ্যুয়াল পরিবেশে গেম খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ ও যোগাযোগ করতে পারবে।
জাকারবার্গ বলেছিলেন, ‘আমরা এখন যা করছি বর্তমান নাম হয়তো সেটাকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন দরকার।
একটি ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আশা করি সময়ের সাথে সাথে আমাদের মেটাভার্স কোম্পানি হিসেবে দেখা হবে এবং আমাদের কাজ ও পরিচয়কে সেদিকে পরিচালিত করতে চাই।’
এর অংশ হিসেবে আমাদের এমন একটি নতুন নাম গ্রহণের সময় এসেছে, যাতে আমরা যা কিছু করছি তার সবকিছু প্রতিলিত হয়।’
বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটি ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে তাদের সদর দপ্তরে একটি নতুন চিহ্ন উন্মোচন করেছে, থাম্বস-আপ ‘লাইক’ লোগোটির পরিবর্তে সেখানে একটি নীল রঙের ‘ইনফিনি’ চিহ্ন প্রতিস্থাপন করেছে।
মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেটার অধিনে থাকবে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ। ‘মেটাভার্স বা পরাবাস্তব জগৎ’ প্রকল্পের অংশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠানটির এ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলে জানান ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা জার্কারবার্গ।
এ ব্যাপারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির বিস্তারিত পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়। ‘মেটাভার্স’ গড়তে পাঁচ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণাও দেয়া হয়।
এই বদলের ফলে ফেসবুকসহ এর অন্যান্য সেবার নাম অবশ্য বদলে যাবে না। ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো সেবার নাম আগের মতোই থাকবে। ‘মেটা’ হবে মূলত এর প্যারেন্ট কোম্পানি।
১৭ বছর আগের হার্ভার্ড কলেজে নিজের নাম পেয়েছিল ফেসবুক। কলেজের ছাত্রদের দেয়া ফেসবুক ডিরেক্টরিজ থেকেই হয় নামকরণ। সেই নাম এ বার বদলাল। আসলে ফেসবুক যে শুধু একটি নেটমাধ্যম সংস্থা নয়, তা বোঝাতেই এই নামবদল।
মেটাভার্সে ফেসবুকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবা পাওয়া যাবে ভার্চ্যুয়াল জগতে, যে জগতে ব্যবহারকারীরা যুক্ত হয়ে বাস্তব দুনিয়ার মতো একে অপরের সঙ্গে কথোপকথন চালাতে পারবেন, একসঙ্গে কিছু কাজও হয়তো করতে পারবেন। ভার্চ্যুয়াল আর বাস্তব জগতের মিশেল বলা যেতে পারে, যা অগমেন্টেড ও ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির সাহায্যে সম্ভব হবে। নতুন ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যাদের মূল কাজ হবে মেটাভার্স তৈরি।
এই বদলের ফলে ফেসবুকসহ এর অন্যান্য সেবার নাম অবশ্য বদলে যাবে না। ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো সেবার নাম আগের মতোই থাকবে। ‘মেটা’ হবে মূলত এর প্যারেন্ট কোম্পানি।
নাম পরিবর্তনের খবরটি এমন সময়ে এল, ফেসবুক যখন তীব্র সমালোচনার মুখে। বাজারে একাধিপত্য, মিথ্যা তথ্যের প্রসার, তথ্য ফাঁসসহ নানা কেলেঙ্কারিতে বিশ্বের নানা দেশে নীতিনির্ধারকদের চাপের মুখে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তা ছাড়া সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন সংবাদমাধ্যমে অভ্যন্তরীণ অনেক তথ্য ফাঁস করেছেন সম্প্রতি। মার্কিন কংগ্রেসে তিনি বলেছেন, ফেসবুক সব সময় মানুষের ভালোর চেয়ে মুনাফায় গুরুত্ব দিয়েছে। এদিকে ব্রিটিশ সংসদে গত সোমবার তিনি বলেছেন, ফেসবুকে সবচেয়ে সহজে ছড়ায় ক্রোধ ও ঘৃণা।
সিইও মার্ক জাকারবার্গ অনলাইনে অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, নতুন নামটি তাদের মেটাভার্স তৈরির লক্ষ্যের প্রতিফলন, জনপ্রিয় মূল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবার নয়। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ব্র্যান্ড কেবল একটি পণ্যের সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত যে তা হয়তো আমরা এখন যা করছি, তার পুরোটাই উপস্থাপন করতে পারছে না, ভবিষ্যতের কথা বাদই দিলাম।’
মার্ক জাকারবার্গ ও তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের দাতব্য সংস্থা চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে মেটা নামের একটি প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই বিজ্ঞান গবেষণাপত্র নিয়ে কাজ শুরু করে। সে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঠিকানা মেটা ডট অর্গ। আগে মেটা ডটকমে প্রবেশ করলেও সরাসরি মেটা ডট অর্গে চলে যেত, এখন নতুন একটি ওয়েবপেজ দেখায়।
জাকারবার্গ বলেছেন, গ্রিক শব্দ ‘মেটা’র ইংরেজি অর্থ ‘বিয়ন্ড’-এর সঙ্গে তাদের লক্ষ্যও মিলে যায়। অর্থাৎ সবকিছুর পরও নতুন কিছু তৈরির সুযোগ থাকল তাদের। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, ভবিষ্যতে মেটার অন্যান্য সেবার উল্লেখের সময় আর মানুষকে ‘ফেসবুক’ ব্যবহার করতে হবে না। যেমন ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ফেসবুক নয়, বরং মেটা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ