লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির বন্দিশিবিরের কমপক্ষে এক হাজার নারী ও শিশু খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এ সতর্কবার্তা দেয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘চলতি মাসে ত্রিপোলিতে হাজার হাজার অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রত্যাশীকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে খুব ঝুঁকিতে থাকা ৭৫১ জন নারী ও ২৫৫টি শিশু রয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, আটককৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি নবজাতক শিশু ও পাঁচটি অভিভাবকহীন শিশু রয়েছে। ত্রিপোলির বন্দিশিবিরের প্রায় ১ হাজার নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতা খুবই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের বন্দিশালায় বিপুল সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী আটকে থাকার প্রেক্ষাপটে সাঁড়াশি অভিযান চালায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, লিবিয়া সরকারের অভিযানে অন্তত পাঁচ হাজার অভিবাসী ও শরণার্থীকে আটক করা হয়।
লিবিয়ায় জাতিসংঘের সহায়তা মিশনের তথ্য অনুযায়ী, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও মাদকপাচারকে লক্ষ্য করে লিবিয়া সরকারের অভিযানে একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে।
লিবিয়ায় ইউনিসেফের ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা ব্রুগিওলা বলেন, ‘নির্বিচারে আটক হওয়াসহ অন্যান্য গুরুতর শিশু অধিকার লঙ্ঘনের মুখে লিবিয়ার অভিবাসী ও শরণার্থী শিশুরা।’
তিনি বলেন, ‘শিশুরা এসব বন্দিশিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। আটক করা শিশুর সংখ্যা আমাদের ধারণা আরও অনেক বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে অনেক ছেলেশিশুকে বন্দিশিবিরে রাখার অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’
এর আগে লিবিয়ায় অভিবাসী বন্দিশালায় চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে রক্ষীদের গুলিতে ছয়জন নিহত হয়। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অভিবাসী সংস্থা বলছে, শরণার্থী এবং অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংস অভিযানের মধ্যেই এ নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলেছে, ত্রিপোলির ঘোট শাল বন্দিশালায় উপচে পড়া ভিড়ের কারণে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এসময় রক্ষীদের গুলিতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষ বন্দিশালার বেড়ার ফাঁক দিয়ে স্রোতের মতো বেরিয়ে যাচ্ছে এবং ত্রিপোলির রাস্তায় দৌঁড়াচ্ছে।
মানবপাচারকারীদের হাতে কিছু বন্দি গুরুতর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অভিযোগ ওঠার মধ্যে এ অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, সম্প্রতি গ্রেফতারদের মধ্যে অনেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সমর্থিত সরকারের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়। পরে তাদের অভিবাসী বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের অমানবিক পরিবেশে রাখা হয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ তুললে অনেককে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়।
লিবিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রেফতাররা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের, যাদের অনেকেই যুদ্ধ এবং নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে এসেছে। অবৈধ অভিবাসন ও মাদকপাচার চক্রের সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
চিকিৎসা সহায়তাদানকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠান এমএসএফ এক বিবৃতিতে জানায়, গত ৪ অক্টোবর থেকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির বন্দি কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। একটি বন্দিকেন্দ্রে ৫৫০ জনের বেশি নারী রাখা হয়েছে। একই সেলের মধ্যে গর্ভবতী নারী, শিশু এমনকি নবজাতক শিশুকেও রাখা হয়েছে। সেখানে শতাধিক বন্দিকে ব্যবহার করতে হচ্ছে একটি টয়লেট।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ