ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসারদের একটি পার্টিতে সহকর্মীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার এক নারীকে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে ‘টু ফিঙ্গার টেস্টে’র মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে; যা দেশটিতে নিষিদ্ধ।
এমনকি ওই নারীর অভিযোগ, অভিযুক্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় তাকে। তিনি মহিলা পুলিশ থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। কারণ ১০ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের পর ২০ তারিখ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ বা কলেজ কমান্ড্যান্ট, কেউ-ই উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থায় খুশি হতে না পেরেই তিনি বাধ্য হয়ে থানায় গিয়েছেন বলে জানান ওই নারী অফিসার। তার দাবি, বিমানবাহিনীতে দু’বার তাকে অভিযোগপত্র তুলে নিতে চাপ দিয়ে বাধ্য করা হয়। আরেকবার তাকে বয়ান বদল করা একটি চিঠিতে সই করতে বলা হয়, কিন্তু তিনি সম্মত হননি। এই মামলায় প্রাথমিক তদন্ত করে গাঁধীপুরম থানার মহিলা পুলিশ টিম। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ অনুচ্ছেদের আওতায় যৌন নিগ্রহের মামলা দায়ের করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা বিমানবাহিনী অফিসার। ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্ট কয়েক বছর আগে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তাকে জোর করে টু ফিঙ্গার টেস্ট করানো হয়। পুলিশ ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিতেষ হারমুখকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন তিনি। নির্যাতিতা এবং অভিযুক্ত, দুজনই ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা। দুজনই প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন এবং গত ৯ সেপ্টেম্বর অফিসারদের মেসে একটি নৈশ পার্টিতে যান।
অভিযোগে মহিলা অফিসার বলেছেন, পায়ের ব্যথার জন্য ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছিলেন তিনি। তখন মদ্যপ অবস্থায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাকে ধর্ষণ করেন। এই ঘটনার কথা আরও দুই ব্যাচমেটকে জানান তিনি। এরপর উইং কমান্ডারকে পুরো ঘটনার কথা তিনি জানান। এক মহিলা উইং কমান্ডারকেও ঘটনার কথা বলেন তিনি। কিন্তু সেই মহিলা নির্যাতিতাকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, পরিবার এবং নিজের নামের কথা ভেবে অভিযোগে চেপে যেতে বলেন।
এরপর দুই উইং কমান্ড্যার আবারও তাকে ভাবতে বলেন। নির্যাতিতাকে বলেন, হয় তিনি অভিযোগ জানান বা লিখিত ভাবে জানান দুজনের সম্মতিতে গোটা বিষয়টি হয়েছে। তবে সাহস দেখিয়ে অভিযোগ জানাবেন বলে ঠিক করেন নির্যাতিতা। এরপর তার যৌনাঙ্গে টু ফিঙ্গার টেস্ট করা হয়।
যদিও ওই নারীর এই টু ফিঙ্গার টেস্টের অভিযোগটি মানতে রাজি না ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী। গণমাধ্যমকে বিবেক রাম চৌধুরী বলেছেন, কোনো টু ফিঙ্গার টেস্ট হয়নি। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা রক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিমানবাহিনী প্রধান আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনায় বিমানবাহিনীর আইন খুবই কঠোর। নারী অফিসারের টু ফিঙ্গার টেস্ট করানোর ভুল খবর বেরিয়েছে। কোনো টু ফিঙ্গার টেস্টই হয়নি। আমরা নিয়মবিধির ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন। যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের এই অভিযোগের তদন্তভার বিমানবাহিনীর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণে অভিযুক্ত ২৯ বছর বয়সী ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের বিচার হবে কোট মার্শাল আইনে, তা জানিয়েছে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাত্তুরের আদালত। অভিযুক্তকে ইতোমধ্যে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে বিমানবাহিনী পিটিশন দাখিল করে জানিয়েছে, অফিসারকে গ্রেফতার করার অধিকার স্থানীয় পুলিশের নেই। সেনা আদালতে তার বিচার করা যাবে। অভিযুক্তকে বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে ভারতের মহিলা কমিশন এক বিবৃতিতে বলছে, বিমানবাহিনীর একজন নারী অফিসারের তোলা অভিযোগের বিষয়ে তারা ভারতীয় বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা ভারতীয় বিমানবাহিনী ডাক্তারদের আচরণে অত্যন্ত হতাশ, ক্ষুব্ধ; কেননা তারা নির্যাতিতার টু ফিঙ্গার টেস্ট করিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন, নির্যাতিতার সম্মান, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারেও হস্তক্ষেপ করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৫৬
আপনার মতামত জানানঃ