ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে এ বিস্ফোরণ ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত শফিকুল ইসলাম (৩০) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের বসির উদ্দিনের ছেলে। আহতরা হলেন একই গ্রামের রাজিব হোসেন (২৮), মোস্তাক আহমেদ (২৭), আজাদ (২৮) ও পুলিশ কনস্টেবল অনুপম ঘোষ।
আহত পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে আজাদকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং রাজিব ও মোস্তাককে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নুর আমিন জানান, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মালখানায় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। শব্দ শুনে আদালতে থাকা লোকজন ছুটে গিয়ে দেখতে পান মালখানার দরজা, জানালা ভেঙে পড়েছে এবং ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
প্রতক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিস্ফোরণের সময় প্রচণ্ড শব্দে গোটা ভবন কেঁপে ওঠে। এ সময় আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। অনেকে জানালার লোহার গ্রিল ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
মালখানার দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই ইমামুল জানান, দুপুরে মালখানার মধ্যে কাজ করছিল গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের ৩/৪ জন শ্রমিক। এ সময় মালখানার কাজে তদারকি করছিলেন কনেস্টেবল অনুপম। হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ভবনে থাকা পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। প্রথমে তিন জন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী ও পরে বিস্ফোরণে শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া শফিকুলকে উদ্ধার করে দমকল বাহিনীর সদস্যরা। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর শফিকুলের মৃত্যু হয়। মালখানার মধ্যে বিস্ফোরক কোনো দ্রব্য ছিল না।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শামিমুল ইসলাম জানান, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় গণপুর্ত বিভাগের ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান আদালতে থাকা উপস্থিত লোকজন। তারা ছুটে এসে দেখতে পান মালখানার দরজা, জানালা ভেঙে পড়েছে এবং ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। পরে সেখান থেকে আহত অবস্থায় ৪ জনকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।
তবে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এখনো জানাতে পারেনি। তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে তারা।
তবে সূত্র মতে, আজ দুপুর দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারের পক্ষে শফিকুল ও তার সহকারী শ্রমিকরা লোহার র্যাক তৈরির সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মালখানায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও উদ্ধার কাজ করা দমকল বাহিনীর সদস্যরা ধারণা করছেন, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত কোনো ইলেক্ট্রিক ডিভাইসে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর একজন মারা গেছে। অপরজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। আর আহত বাকি দুজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/২২৩৮
আপনার মতামত জানানঃ