মেয়েদের স্কুলে ফেরার দাবি জানিয়ে রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ করেছেন আফগান নারীরা। বিক্ষোভরত নারীদের ওপর তালিবান ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে বৃহস্পতিবার একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুলের পূর্বাঞ্চলের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মেয়েদের স্কুলে ফেরার দাবিতে ছয়জন নারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তানের স্কুলগুলো খুললেও মেয়েদের আসার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি তালিবান।
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির সংবাদকর্মীরা। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কাবুলের পূর্বাঞ্চলের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সামনে ছয় জন নারী ছোট একটি মিছিল বের করেন। মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের ফেরার অধিকার আছে জানিয়ে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমাদের কলম ভাঙবেন না, আমাদের বই পুড়িয়ে দেবেন না, আমাদের স্কুল বন্ধ করবেন না’।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের বাধা দেয় সশস্ত্র তালিবান সদস্যরা। একপর্যায়ে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। তালিবানের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।
একজন বিদেশি সাংবাদিক ওই বিক্ষোভের দৃশ্য ধারণ করার সময় তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং তাকে রাইফেল দিয়ে আঘাত করা হয় বলে জানা গেছে।
এ সময় এক তালিবান সদস্য তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে শূন্যে গুলি ছোঁড়েন বলে ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির সাংবাদিক জানিয়েছেন।
পরে বিক্ষোভকারীরা স্কুলের ভেতরে আশ্রয় নেয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তালিবান গার্ড মৌলভী নাসরাতুল্লাহ জানান, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করেননি।
তিনি বলেন, তারা অনুমতি ছাড়াই মিছিল বের করেন। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সবারই আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু তার আগে কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে।
১৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর তালিবান আগের কঠোর মনোভাব থেকে সরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু নারীদের স্কুলে ফেরা এবং কর্মক্ষেত্রে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাসহ নারীদের প্রতি তালিবানের বিরূপ মনোভাব অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে তালিবানের গৃহীত পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ এবং ‘একধাপ পিছিয়েছে’ বলে জানিয়েছে কাতার। কীভাবে একটি ইসলামি ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয় তালিবান নেতাদের তা দোহাকে দেখে শেখার অনুরোধ জানিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি।
বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তান প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তারা।
শেখ মোহাম্মদ বলেন, আফগানিস্তানে সম্প্রতি নারী ও মেয়েদের বিষয়ে তালিবান যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা খুবই হতাশাজনক। এ ধরনের পদক্ষেপ আফগানিস্তানকে আরও পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে শিক্ষার্থী এবং পুরুষ শিক্ষকদের ফেরার অনুমতি দেয় তালিবান সরকার। কিন্তু মেয়েদের স্কুলে ফেরার অনুমতি দেয়নি। তারা কবে স্কুলে ফিরতে পারবে বিষয়টি স্পষ্টও করেনি। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে আফগান তালিবান সরকার। এ ছাড়া নারীদের নতুন সরকারেও রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তালিবানদের দেখানোর চেষ্টা করছি অন্যান্য মুসলিম দেশ কীভাবে আইন পরিচালনা করে এবং নারীদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করছে’।
সংবাদ সম্মেলনে জোসেফ বোরেলও আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় হতাশা ব্যক্ত করেন।
এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালে তালিবান সরকারের অধীনে নারীদের অধিকার সম্পূর্ণ হরণ করা হয়। কেনো মেয়ে স্কুলে যেতে পারতো না, বাইরে কাজ করতে পারতো না। সবাইকে বোরকা ও হিজাব পরিধান করতে হতো এবং বের হতে হলে পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে বাধ্যতামূলত সঙ্গে রাখা লাগতো। এছাড়া তাদের জোর করে বাল্যবিবাহ দিতো তালিবান শাসকগোষ্ঠী।
তবে এবার ক্ষমতায় এসে তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ইসলামি আইনের অধীনে তারা এবার নারীদের অধিকার নিশ্চিত করবে। যদিও সেটিতে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না আফগান নারীরা।
এর মাঝেই গত মাসেই তালিবান নির্দেশ দিয়েছে, নারীরা যেন আপাতত ঘরে থাকে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নারীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, তা অনেক তালিবান সদস্য এখনো জানে না। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই নারীরা বাইরে কাজের সুযোগ পাবে। তবে এটাকে তালিবানের এক প্রকার কৌশল বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের আফগান দখলের পর থেকেই দেশটিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। অত্যাচার নিপীড়নের পাশাপাশি বাড়ি থেকে কম বয়সী নারীদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এমনকি মৃতদের ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রা থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। কর্মজীবী নারীদের উপর নেমে আসছে নিয়মের খড়গ। এবার তাই নিজেরাই রুখে দাঁড়াচ্ছেন আফগান নারীরা। বিক্ষোভে নেমে আসছেন রাস্তায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩৩
আপনার মতামত জানানঃ