করোনা মহামারির মধ্যে এখন আতংকের নাম হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। চলতি মাসের প্রথম চারদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হাজার ছাঁড়িয়েছে। এসময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও পাঁচজনের। এ নিয়ে এ বছর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ জন। এসময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫০১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শনিবার(০৪ আগস্ট) বিকেলে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৩২ জন ঢাকার ও ৩৩ জন ঢাকার বাইরের।এসময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১২ জন, আগস্টে ৩৪ জন ও চলতি মাসের আজ (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন।
এ নিয়ে সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৭৩ জনে। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে এক হাজার ১৩৭ ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগে ৩৩ জন ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৫০১ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ হাজার ১৭৪ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ভর্তি ২৬৫ জনের রাজধানী ঢাকায় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৮১ জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৫১ জন রোগী ভর্তি হন। এছাড়াও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগে ৩৩ জন ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন, আগস্টে সাত হাজার ৬৯৮ জন ও চলতি মাসের এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৪৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১২ জন, আগস্টে ৩৪ জন ও চলতি মাসের আজ (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন।
২১ বছর ধরে দেশে ডেঙ্গুর সার্বিক বিষয় নিয়ে তথ্য জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেই বছর এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মারা যায় ১৪৮ জন। ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু আর কখনও দেখেনি দেশ। এর আগে ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ২০০২ সালে, সেবার ৫৮ জনের মৃত্যু সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া ২০০১ সালে ৪৪ জন মারা যায়। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেও করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে এবার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা করোনা হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার। তাদের যেন হাসপাতাল থেকে ফেরত না দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আসার আগে ডেঙ্গু চিকিৎসা হতো সব হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। ওই বিভাগগুলোকে এখন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীরা অবহেলিত হচ্ছেন। করোনার সংক্রমণ এখনও সেভাবে কমে আসেনি। তাই করোনার মধ্যেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
গত ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ছয়টি হাসপাতালকে ডেডিকেটেড করে নাম ঘোষণা করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতালসহ ঢাকার বাইরে গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালকেও ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করা হয়েছে।
এর প্রায় এক মাস আগে ২৫ জুলাই আরেকটি ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, করোনার চিকিৎসা আর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা এক হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব নয়। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনটা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। তাই আজ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিত করেছি। যেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবো।’ সেদিনই তিনি ওই ছয়টি হাসপাতালের নাম ঘোষণা করেন।
তালিকায় থাকা একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষ যখন জেনেছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা নিতে আসবে। কিন্তু এখনও হাসপাতালগুলো প্রস্তুত নয়। তাই রোগীদের ফেরত যেতে হচ্ছে।
হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাব আছে অনেকের। একটি হাসপাতাল তো এখনও অফিসিয়াল নির্দেশই পায়নি।
স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড (বিশেষায়িত) বলে দেওয়া হলেও হাসপাতালগুলোর সবক’টি এখনও চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। জনবল সংকটের সঙ্গে রয়ে গেছে যন্ত্রপাতির অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যা। এমনকি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে সরকারি অর্ডারই পায়নি ডেডিকেটেড ঘোষিত হাসপাতালগুলো।
তারা বলেন, বর্তমান সময়ে যারা স্বাস্থ্যের দায়িত্বে কাজ করছেন তারা কোনোভাবেই এর যোগ্য নন। তারা যা বলেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার যোগ নেই। গণমাধ্যমের সামনে এলেই একটা কিছু বলতে হবে, তারা এমনটা ভেবে বসে আছেন বলেই আজ এ অবস্থা।
তারা বলেন, সরকার স্বাস্থ্যের জন্য টাকা ঢালছেন ঠিকই কিন্তু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের জন্য কোনো কাজেই আসছে না। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৩
আপনার মতামত জানানঃ