আফগানিস্তান দখলের পর কি এবার কাশ্মীরেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে তালিবান? পাকিস্তান ও চীন প্রকাশ্যেই তালিবানকে সমর্থন করায় ভারতের জন্য এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সংবাদসংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, কাশ্মীরের দিকে নজর নেই তালিবানের। তাদের মতে, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক ও অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফলে আশা করা হচ্ছে কাশ্মীরের দিকে নজর দেবে না তালিবান।
আফগানিস্তান দখলের ঠিক ২ দিন পর সাংবাদিক বৈঠক করল তালিবান নেতারা। আর সেই সাংবাদিক বৈঠকেই উঠে এল কাশ্মীর প্রসঙ্গ। কাশ্মীরের যে এলাকা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব জারি রয়েছে, সেই বিষয়ে এবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল তালিবানরা।
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক বৈঠকটি হয় কাবুলে। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ। তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদের কথায়, ‘কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ এবং দ্বিপাক্ষিক বিষয়। কাশ্মীর নিয়ে মাথা ঘামাতেও বিশেষ আগ্রহী নয় তালিবানরা৷’
ভারতীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ছিল তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয়ার পর ভারতের কাশ্মীরের দিকে সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম বাড়িয়ে তুলবে। কাশ্মীরে উগ্রবাদকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালাবে তালিবানরা।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের কথায়, ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে নাশকতামূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে লস্কর-ই-তৈবা। আর লস্কর-ই-তৈবার নাশকতামূলক কাজকর্মে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। আবার আফগানিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে ঘাঁটি তৈরি করেছে এই লস্কর-ই-তৈবা। সেখানেও তালিবানরা মদত দিচ্ছে লস্কর-ই-তৈবার নাশকতামূলক কাজকর্মে।
মূলত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা, লস্কর-ই-ঝাংভি আফগানিস্তানে কিছুটা হলেও সক্রিয়। এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, এই জঙ্গি সংগঠনগুলো তালিবানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাবুলের একাংশ এবং বেশ কয়েকটি গ্রামাঞ্চলে চেকপোস্ট তৈরি করেছে।
গত রোববার (১৫ আগস্ট) কাবুল দখলে নিয়েছে তালিবানরা। আফগানিস্তানে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের অপেক্ষা। এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন দেশটির সরকার।
আফগানিস্তান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গনি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর গতকাল (১৭ আগস্ট) প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেছে তালিবান। এতে মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘বিশ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর সংগ্রামের পর আমরা দেশকে মুক্ত করেছি ও বিদেশিদের তাড়িয়ে দিয়েছি। এটা পুরো জাতির জন্য গর্বের মুহূর্ত। আমরা বিদেশি কিংবা অভ্যন্তরীণ শত্রু চাই না।’
সরকার গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে জাতির সামনে কোন আইন উপস্থাপন করা হবে। শুধু এটা বলতে চাই, আমরা সরকার গঠনে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। এটি শেষ হওয়ার পরে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।’
তবে ভারত সরকার মনে করছে, কাশ্মিরে চেষ্টা করলেও খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না তালিবানরা। যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাশ্মিরে নিরাপত্তা আরও জোরদার করছে দেশটি।
বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহল এক সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছে, কাশ্মিরে নজরদারি এবং নিরাপত্তা দুই-ই বাড়ানো হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে কাশ্মিরে বিশেষ কোনো প্রভাব বিস্তারে আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেই।
দুই দশক পর মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তান থেকে ফিরতেই ফের জাঁকিয়ে বসেছে তালিবান। যার জেরে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতও প্রবল চাপের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ১৯৯৬ সালে যখন তালিবান আফগানিস্তানের তখতে বসেছিল, তখন তাদের পাশে ছিল শুধু পাকিস্তান। কিন্তু, এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।
পাকিস্তানের পাশাপাশি চীন, রাশিয়ার মতো মহাশক্তিধর দেশ এবং ইরান, তুরস্কও তালিবানের প্রতি নরম। কারণ, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে শত্রুর শত্রু, আমার বন্ধু। এখন স্বাভাবিকভাবেই চীন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্কের মতো দেশ তালিবানের দিকে চলে যাওয়ায় একদিকে তাদের শক্তি যেমন বাড়বে, অন্যদিকে তেমন আন্তর্জাতিক মহলে ভারত পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
পাশাপাশি আফগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার ফলে কাশ্মীরের ওপর ঘনাচ্ছে উদ্বেগের মেঘ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের সঙ্গে জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবার মতো জঙ্গি সংগঠনের যোগ অত্যন্ত পরিষ্কার। আর এই দুটি জঙ্গি সংগঠনেরই টার্গেট কাশ্মীর। তাহলে এবার তালিবানের সাহায্য নিয়ে মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সঈদের জঙ্গি সংগঠন কাশ্মীরে নতুন করে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করবে কিনা এই প্রশ্ন আলোচনায় উঠে আসছে বারবার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালিবান মূলত দুভাবে রিক্রুট করে। একটা অংশ ভাড়াটে জঙ্গি। আরেকটা অংশ ধর্মীয় কট্টরপন্থী। ১৯৯৬ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসার পর কাশ্মীরে ভাড়াটে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২১০
আপনার মতামত জানানঃ