আমাজন ধ্বংস ও গণহত্যার অভিযোগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্থ হলো আমাজনের বাসিন্দারা। আমাজনের প্রায় সমস্ত গোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে তৈরি হয়েছে এপিআইবি বলে একটি সংগঠন। মামলাটি তারাই করেছে। প্রসঙ্গত, ব্রাজিলে কমপক্ষে একশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস, যাদের এখনও বাইরের বিশ্বের ছোঁয়া লাগেনি৷
ব্রাজিলের আমাজনের বাসিন্দাদের এই সংগঠনটির অভিযোগ, জাইয়া বলসোনারো একদিকে যেমন আমাজন ধ্বংস করছেন, তেমনই আমাজনে বসবাসকারী জনজাতিগুলোকেও শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন। আইনের ধোঁয়াশা তৈরি করে তাদের জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যার ফলে লড়াই হচ্ছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। একেই গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছেন আমাজনের বাসিন্দারা।
তাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ধরে বলসোনারো আমাজনের বাসিন্দাদের অপমান করেছেন। তাদের অধিকারের প্রশ্ন সামনে এলেই তিনি চিড়িয়াখানার জন্তুদের সঙ্গে তাদের তুলনা করেছেন। একবার নয়, বারবার।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ আমাজনের জনগোষ্ঠীদের জন্য চিহ্নিত জায়গায় অবাধে খনি তৈরি করতে দিয়েছেন বলসোনারো। গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন। আমাজনের জনগোষ্ঠীর জঙ্গলের অধিকার আছে। সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তাদের জন্য জায়গা চিহ্নিত করার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এপিআইবি-র অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, খনির মালিকরা তাদের এলাকায় এসে কাজ করতে গেলে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আমাজনের জনগোষ্ঠীর বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার দায় বলসোনারোকে নিতে হবে। তিনি পরিকল্পনামাফিক জনগোষ্ঠীগুলিকে ধ্বংস করতে চাইছেন। সে কারণেই তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করা হয়েছে।
গত বুধবার ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো একটি নতুন বিল প্রস্তাব করেছেন৷ কংগ্রেসে এটি পাস হলে আমাজনে খনি, কৃষিকাজ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন সহজ হবে৷ তিনি আশা করছেন, তার এই ‘স্বপ্ন’ পূরণ হবে৷
যদিও ব্রাজিলের আদিবাসী সংগঠনের কর্মকর্তা সোনিয়া গুয়াজাজারা বলছেন, ‘‘বলসোনারোর স্বপ্ন আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন৷ এটা আমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে৷ খনি কোম্পানি মৃত্যু, রোগ আর কষ্ট নিয়ে আসে৷ এবং এটা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবে৷’’
গবেষক ব্রেন্ডা ব্রিতো বলছেন, ব্রাজিলের আইন জমি দখল ও বন ধ্বংসকারীদের পক্ষে৷ এটি (এই আইন) আপনাকে জমি দখলের অনুমতি দেয়, যদি আপনি একে কাজে (বৈধ কাজ) লাগানোর ভান করেন, এবং এরপর জমির মালিকানা দখল করে নেন৷ বলসোনারো এই আইন আরও সহজ করে জমি দখলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন৷
বলসোনারো আসার পর গতবছর ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমাজন ধ্বংস হয়েছে৷ গত বছর আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ২১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি৷
তবে আন্তর্জাতিক আদালতে এটাই প্রথম বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা নয়। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছিল। আমাজনে আগুন লাগার পিছনে বলসোনারোর হাত আছে, এমন অভিযোগ উঠেছিল। আমাজন ধ্বংস করে ওই এলাকা তিনি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
হেগের আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়েছে, নতুন মামলাটিকে পুরনো মামলাটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে। মামলার শুনানি শুরু হবে বলেও আদালতের তরফে জানানো হয়েছে।
প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের দাবি, বলসোনারোর আমলে ব্রাজিলের আমাজনের অনেকটাই ধ্বংস করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিজে প্রকাশ্যে বলেছেন, আমাজন রক্ষা করতে গেলে উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ