বার্লিন থেকে ৫৪ বছর বয়সী এক সিরিয়ানকে ২০১৪ সালে দামেস্কে গ্রেনেড হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। জার্মান আইনজীবী ওই ব্যক্তির উপর বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছেন। জার্মান পুলিশ গত বুধবার বার্লিন থেকে দামেস্কে যুদ্ধাপরাধে ওই সিরিয়ানকে আটক করেন।
এদিকে সিরিয়ান শরনার্থীরা নিজ দেশে তাদের সাথে হওয়া যুদ্ধাপরাধের সুবিচার চায়। তাই বর্তমানে জার্মান কর্তৃপক্ষ একই ধরনের বেশ কিছু মামলা অনুসন্ধান করে দেখছে।
জার্মান আইনজীবী গ্রেফতারকৃত ৫৪ বছর বয়সী সিরিয়ান ব্যক্তির উপর ২০১৪ সালে এক চত্ত্বরে জমা হওয়া বেসামরিক মানুষের জমায়েতে গ্রেনেড হামলার অভিযোগ এনেছে। ওই বিস্ফোরণে অন্ততপক্ষে সাতজন নিহন হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৩ জন; যার মধ্যে ছয় বছর বয়সী এক শিশুও ছিল।
অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ আছে। এর সাথে সম্পর্কিত ৭ জনের হত্যা এবং ৩ জনকে মারাত্মকভাবে আহত করার অভিযোগেও তিনি অভিযুক্ত, আইনজীবী বলেন।
আইনজীবী অনুসারে, ওই হামলা চালানোর সময় অভিযুক্ত এই ব্যক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিন আন্দোলনে যুক্ত ছিল। পাশাপাশি এই ব্যক্তি ফিলিস্তিনী বিপ্লবী সংস্থা পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন জেনারেল কমান্ড (পিএফএলপি-জিসি) আর্মড মিলশিয়ার একজন সাবেক সদস্য।
১৯৬৮ সালে পিএফএলপি-জিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এ সংগঠন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদ সরকারের কাছ থেকে অনুদান পেত; যা বাশার আল-আসাদের আমলেও অব্যাহত রয়েছে। পিএফএলপি-জিসি ইয়ারমুকের দক্ষিণ দামেস্কের প্রতিবেশী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গঠিত।
সিরিয়ান যুদ্ধ শুরু হবার পর, ইয়ারমুকের অধিকাংশ বসবাসকারী শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়; সংখ্যায় যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। যারা শহরে থেকে যায়, সরকারের অবরোধের কারণে তারা ভয়াবহ খাদ্যসংকটে পড়ে।
২০১৫ সালের এপ্রিল অব্দি ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ ইয়ারমুকে খাদ্য সরবরাহ করতে পেরেছিল। এরপর ইসলামিক স্টেট জিহাদিরা ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইয়ারমুক শরণার্থী শিবিরেরও একটা বড় অংশ আইএস-এর দখলে তখন।
ওই হামলার ভুক্তভোগীরা ইউএনআরডব্লিউএ থেকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছিল; যখন তাদের উপর ওই নৃশংস হামলা চালানো হয়।
এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিচার শুরু হয় জার্মানিতে। গণহত্যা সম্পর্কিত বিষয়ে জার্মানির আন্তর্জাতিক এখতিয়ারের অংশ হিসেবে দেশটি প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে এ বিচারকাজ শুরু করেছিল।
আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সিরিয়ার ঘোটা শহরে ২০১৩ সালে আসাদবিরোধী বিক্ষোভের শুরুর দিকে বিষাক্ত সারিন গ্যাস প্রয়োগ করে মানুষকে গণহারে হত্যা করা হয়। এতে ওই অঞ্চলে ১ হাজার মানুষ গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। ২০১৭ সালের দিকে খান শেইখুন শহরেও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টিও অভিযোগে উঠে আসে।
এদিকে, জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন সিরিয়ায় গত দশ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় আটক হওয়া লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এখনো নিখোঁজ। আরও কয়েক হাজার ব্যক্তি হয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার সময়েই মারা গেছেন।
দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে নতুন এক রিপোর্টে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সিরিয়া বিষয়ক এই তদন্ত রিপোর্টটি প্রণয়ন করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ সাক্ষ্য আর আটকের পর একশটির বেশি ঘটনার উপর ভিত্তি করে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয় সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনো চলছে।
এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ আশি হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ষাট লাখ মানুষ।
আপনার মতামত জানানঃ