প্রতিবছর ডাক্তারি পাশ করে বের হচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। তবু শূন্য পড়ে থাকছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরী করা হাসপাতাল। তাতে নেই কোনো ডাক্তার, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে আছে বছরের পর বছর, নেই কোনো সরকারি নজরদারিও।
বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌরসভার রথবাড়ি, শিবগঞ্জের আলিয়ারহাট ও নন্দীগ্রামে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যার তিনটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয় ১৫ বছর আগে। এই হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামোগতসহ সকল সুবিধা থাকলেও নেই শুধু চিকিৎসাসেবা।
জনবল সংকট ও বরাদ্দ না থাকায় বগুড়ার আদমদীঘি, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রামে ১৫ বছর আগে নির্মিত ২০ শয্যার তিনটি হাসপাতাল আজও চালু হয়নি। এ কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। তবে হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে সেবা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। পূর্ণাঙ্গরূপে হাসপাতাল চালুর দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।
জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে বগুড়ার নন্দীগ্রামে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। নির্মাণ কাজ শেষে তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয় ২০০৬ সালে। নির্মাণ কাজ আর যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলেও ১৫ বছর ধরে চালু করা হয়নি এই হাসপাতাল। এ ছাড়া আদমদীঘির সান্তাহার ও শিবগঞ্জের আলিয়ার হাটে অবস্থিত হাসপাতালেরও একই অবস্থা। নন্দীগ্রাম হাসপাতাল নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৮ টাকা।
প্রায় একই সময়ে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই হাসপাতালের প্রাথমিকভাবে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৮ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই হাসপাতাল আবারও সংস্কার করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার আলীয়ারহাট হাসপাতালের নির্মাণ ব্যয় ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে এই বিশাল টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব হাসপাতাল এখনও চালু হয়নি। কারণ হিসেবে জনবল সংকটকে দায়ী করা হয়েছে। সান্তাহার ছাড়া অন্য দুটি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তৈরি ভবনগুলোরও বেহাল দশা।
বগুড়ার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে নন্দীগ্রামের ওই হাসপাতালের জন্য ১৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, ৬ জন চিকিৎসক, ৫ জন সেবিকা, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন ল্যাব সহকারী। একই সময়ে চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ শিবগঞ্জের আলীয়ারহাট হাসপাতালের জন্য ১১ জনকে পদায়ন করা হয়। এবং সান্তাহারেও কিছু পদ সৃষ্টি করা হলেও পরিচ্ছন্নকর্মী, পিয়ন, আয়া, ওষুধ বরাদ্দ না থাকাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে তাদের সেখানে রাখা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সান্তাহার পৌরসভাসহ আশপাশের লক্ষাধিক মানুষের জন্য শহরে কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র বা হাসপাতাল নেই। চিকিৎসার জন্য এই এলাকার মানুষকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নওগাঁ সদর হাসপাতাল অথবা আট কিলোমিটার দূরে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। কিন্তু সান্তাহার পৌরসভার রথবাড়ি এলাকার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি।
আলীয়ারহাট হাসপাতালের অবস্থান শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। বগুড়া শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। এখানে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। তারা আউটডোরে চিকিৎসাসেবা দেন। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি একজন নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন। তবে এখানেও পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া হয় না। জটিল কোনো রোগের জন্য জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে ছুটতে হয়।
হাসপাতাল তৈরী করে রেখেও তার ব্যবহার না করে ফেলে রাখার পাশাপাশি রোগীদের দূরে চিকিৎসা নিতে যাবার ভোগান্তিকে চরম অন্যায় হিসেবে দেখছে বিশেষজ্ঞরা। এসব হাসপাতাল খোলার সাথে এতদিনকার হেলাফেলার সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিৎ বলে মনে করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮২৮
আপনার মতামত জানানঃ