কাশ্মীরে বিজেপি নেতাদের উপর জঙ্গি হামলা নতুন কিছু নয়। সুযোগ পেলেই সন্ত্রাসবাদীরা উপত্যকার বিজেপি নেতাদের টার্গেট করে। এমনকি বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার মৃত্যুও হয়েছে। এই কারণেই একটু বেশী সুরক্ষা দেওয়া হয় জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের। কিন্তু এবার আরও বেশী সুরক্ষা পাওয়ার জন্য মিথ্যা জঙ্গি হামলা চালনার অভিযোগে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ দুই বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে।
কাশ্মিরের কুপওয়াড়ায় ভুয়া উগ্রপন্থী হামলা সাজানোর অভিযোগ ভারতের হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতসীন দল বিজেপির দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মিথ্যে হামলা সাজানোর অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। একইসাথে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরকেও।
কিভাবে ভুয়া হামলার ছক সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল এ সম্পর্কে দু’-এক দিনের মধ্যেই বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা।
কাশ্মীরের মতো অঞ্চলে এমন ভুয়া হামলা সাজানোর চেষ্টা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, নিজেদের নিরাপত্তা আরো খানিকটা বাড়াতেই এই পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। প্রধান অভিযুক্ত ইসফাক আহমেদ মীর কুপওয়াড়ার আইটি সেলের প্রধান।
অপরজন বশরত আহমেদ বিজেপির জেলা মুখপাত্র। তারা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে ওই ভুয়া হামলার ঘটনা সাজান বলে জানতে পারে পুলিশ। এরপরই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
ইসফাকের বাবা মহম্মদ শাফি মীর কুপওয়ারায় বিজেপির জেলা সভাপতি। তার ছেলের নামে এমন অভিযোগ ওঠার পরই তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিজেপি। যতদিন এই ঘটনার তদন্ত চলবে ততদিন তিনি বহিষ্কারই থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে আরো বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই ইসফাক অভিযোগ করেন, কুপওয়াড়ার গুলগামে ত্রাণ বণ্টনে গিয়ে উগ্রপন্থী হামলায় পড়তে হয়েছিল তাকে। এমনকি উগ্রপন্থীদের একটি গুলি তার পায়ে লেগেছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দেয় পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিন কোনো উগ্রপন্থী হামলাই হয়নি ওখানে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, ইসফাকের নিরাপত্তা কর্মকর্তার বন্দুক থেকেই দুর্ঘটনাবশত বেরিয়ে গিয়েছিল গুলি। এরপরই উগ্রপন্থী হামলা সন্দেহে অন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও গুলি চালান।
পরে সামনে আসে আসল সত্য। জানা যায়, ইসফাক, বশরত ও তাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মিলেই ওই ভুয়া হামলা সাজিয়েছেন। অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হলে তাদের সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে, বিজেপি জানিয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া অবধি ইশফাকের বাবা মোহাম্মদ শফি মীর যিনি কুপওয়ারার জন্য জেলা জেলা সভাপতি তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত করে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলেই সংবাদ মাধ্যমে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জম্মু কাশ্মীর ঘিরে উত্তেজনা সবসময়ই তুঙ্গে। সন্ত্রাসী হামলা সেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সোমবার সকালেই জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলির লড়াইয়ে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে লস্কর ই তৈবা জঙ্গি গোষ্ঠীর এক উচ্চপদস্থ কম্যান্ডার রয়েছে বলে জানা যায়।
জম্মু-কাশ্মীরের ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বিজয় কুমার জানিয়েছেন, নিহত লস্কর কম্যান্ডারের নাম ইশফাক দার ওরফে আবু আক্রম। ২০১৭ সাল থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় নাশকতার কাজে যুক্ত ছিল সে। অপর জঙ্গিকে শনাক্ত করা যায়নি।
সংঘর্ষ স্থল থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এখনও তল্লাশি চালাচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কোনও জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতাদের গুজব ছড়ানো আর আজ বুধবার সকালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মুর বিমান ঘাঁটিতে হামলার কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই একই এলাকায় আবার অত্যাধুনিক ড্রোন উড়তে দেখা যাওয়ার ঘটনা উস্কে দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদের আগুন।
বুধবার ভোর ৪টার দিকে ড্রোনটি নজরে আসে। ড্রোনটি মূলত ভরতের সাতওয়ারি বিমান ঘাঁটি থেকে আকাশপথে মাত্র কয়েকশত মিটার দূরত্বে উড়তে দেখা যায়।
এর আগে গত ২৭ জুন বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল। আহত হয়েছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুই সদস্য।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ