মিয়ানমারে সামরিক ক্যু’র পর অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় অন্তত দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো–অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের কয়েক মাস পরে এসে জাতিসংঘ এ তথ্য দিল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, সংঘাতের মুখে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত মানুষের বড় পরিসরে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। খাবার, আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন প্রাপ্তির সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিক ধাক্কা সামলানোর জন্য তাদের সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে, এমনটাই মনে করছে ওসিএইচএ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুতদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ অপ্রতুল। রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষেরা বলছেন, তারা খাদ্য সংকটে আছেন। ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে রোগ। শিশুদের অনেকে ডাইরিয়ায় ভুগছে। পরিষ্কার পানির অভাব। অনেকে চাল কিংবা খাবার আনার সুযোগও পাচ্ছেন না।
মিয়ানমার জান্তা তাদের বিরোধীদেরকে সন্ত্রাসীর তকমা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে নবগঠিত কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের মতো জান্তা বিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস, যারা ওই অঞ্চলে গত মাস থেকে লড়াই করে আসছে। এ লড়াইয়ে সামরিক বাহিনীতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
এসব সংঘাতের জের ধরে কারেন রাজ্য থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ। গত মাসে এ রাজ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার মানুষ। কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) মিয়ানমারের অন্যতম বৃহত্তম সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন।
একইভাবে ভারতের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের প্রত্যন্ত রাজ্য শিন থেকেও বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠনগুলোর উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন ও শান রাজ্যের হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে আবেদন আসায় জান্তা বিরোধীরা হামলা বন্ধ করবে বলে জানালেও, জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া অনেক মানুষই বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছে। এ আন্দোলন দমন করতে গিয়ে অন্তত ৮৫০ জনকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা মানুষেরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। কয়েকটি রাজ্যে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জোর লড়াই চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জান্তা বিরোধীদের সংঘর্ষের পর অনেক জায়গায় গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
ভারতের রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের মোট সংখ্যা নয় হাজার ২৪৭ জন। তারা বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় নিয়ে আছে। ভারতের মিজোরাম, মনিপুর ও নাগাল্যান্ড রাজ্য মিলে মিয়ানমারের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী কয়েক মাসে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
নিজ দেশের জনগণের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে দমনপীড়নের জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন জান্তাপ্রধান হ্লাইং। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের সেনাসদস্য ও সেনাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরপরও কমেনি জান্তার দমনপীড়ন। পাল্টা-আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন সেনাশাসনের বিরোধীরা। দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলছে। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
এদিকে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে আসিয়ান। এ জন্য আঞ্চলিক সংস্থাটির শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা সফর করেছিলেন জান্তাপ্রধান হ্লাইং। আসিয়ানের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে এসব উদ্যোগের এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এর মাঝেই গত সপ্তাহে মিয়ানমারে রক্তপাতের নিন্দা প্রকাশ করে ও দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এ প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ