১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতে দেশে অন্তত ২৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) প্রকাশিত নির্বাচনী সহিংসতাবিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বড় নির্বাচনী সংঘাত হয় ২০০১ সালে। ওই নির্বাচনে ৩৪৫টি সংঘর্ষে ১৫০ জন নিহত এবং ৯ হাজার ১৭৪ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম প্রাণহানির ঘটনা ঘটে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে প্রাণ হারায় ১০ জন। সিজিএসের গবেষণা বলছে, নির্বাচনী সংঘাত সবচেয়ে বেশি ঘটেছে চট্টগ্রাম, ফেনী, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে। এর পরেই আছে সিরাজগঞ্জ, সিলেট ও ময়মনসিংহ। তুলনামূলক কম সংঘর্ষ হয় বান্দরবান ও ঝালকাঠিতে। ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে পোলিং এজেন্টদের ওপর হামলা বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সবচেয়ে বেশি হামলা হয় ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ওই সময় পোলিং এজেন্টদের ওপর হামলায় ৬৮ জন আহত এবং পাঁচজন নিহত হয়।
সিজিএসের প্রতিবেদন
প্রতিবেদনে পাঁচ বছরের অবৈধ অস্ত্র মামলার চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০১২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত দেশে মোট আট হাজার ৬৩৭টি অবৈধ অস্ত্র মামলা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। ওই দুই বছরে যথাক্রমে দুই হাজার ২৩ ও দুই হাজার ৮১টি অস্ত্র মামলা হয়।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনী সংঘাতে মোট ১২২টি ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করা হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইইডির বিস্ফোরণে ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে মোট ১০২ জনের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিবেদনে ভোটকেন্দ্র দখল ও অবৈধভাবে জোরপূর্বক ভোট প্রদানের কথাও উল্লেখ করা হয়। নির্বাচনী সহিংসতার ইঙ্গিত হিসেবে বড় ধরনের শোডাউন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, ভয় দেখানো, নাশকতা, অপরিচিত ব্যক্তির আনাগোনা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনী সংঘাত কমিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের ওই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ভোটকেন্দ্রের বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাচন পূর্ববর্তী বিতর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, কোড অব কনডাক্ট মেনে চলা, নির্বাচনক্ষেত্রের সীমা নির্ধারণ ইত্যাদি।
আপনার মতামত জানানঃ