কোনো কিছুতেই থামছে না ছাত্রলীগ। বিগত কয়েক বছর ধরে যেখানেই কোনো ঘটনা ঘটে, তার সবকিছুর সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে ছাত্রলীগের নাম আসে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, নারী নিপীড়ন কিংবা ধর্ষণ— যত অভিযোগ, সবই তাদের বিরুদ্ধে। এবার সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজার বিরুদ্ধে অত্যাচার, নির্যাতন ও মুখে অ্যাসিড মেরে ঝলসে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ তুলেছেন এক স্কুলশিক্ষিকা।
ঘটনার বিবরণে ওই স্কুল শিক্ষিকা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ নভেম্বর-২০২০ সালে সাতক্ষীরার আলিপুর এলাকার খবির উদ্দিনের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রেজা ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পরে রেজা তাকে বলে-বিয়ে এখন গোপন রাখতে হবে, কাউকে বলা যাবে না। বিয়ের সময় সাতক্ষীরা আলিপুরের আব্দুস সালাম, সহিদুল ইসলাম, শিকড়ীর মহিউদ্দিন স্বাক্ষী ছিলেন। বাকীতে দুই লক্ষ টাকার দেনমোহরে তাদের বিবাহ সম্পান্ন হয়। যার বই নং-৫৫, পেজ নং-৩৮, তাং-১৮-১১-২০২০ খ্রি:। বিবাহ পড়ান ব্রহ্মরাজপুরের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার মাও: রওশন আলম।
বিয়ে দীর্ঘ দিন হয়ে যাওয়ার পরেও তাকে ঘরে তুলে না নেওয়ার ঘটনায় তিনি বিষয়টি এলাকায় প্রকাশ করে দেন। এনিয়ে তাদের দুইজনের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ওই প্রতারক রেজা স্কুল শিক্ষিকাকে বিভিন্ন সময় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনসহ যৌতুক দাবী করে হয়রানী করে আসছে। বাধ্য হয়ে রোববার (২ মে) আমি তাকে ডিভোর্স দেই। এরপরও নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে কলারোয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, আমি তাকে বিয়ে করেছি সংসার করার জন্য। কিন্তু তাকে বাড়িতে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। সে বাড়িতে না এসে নানাভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। আগামী সম্মেলনে আমি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ায় আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে দিয়ে এসব করাচ্ছেন।
কলারোয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবীর বলেন, মেয়েটি তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছে। এরপরও তার স্বামী তাকে অ্যাসিড মারার হুমকি দিচ্ছে বলে মেয়েটি জানিয়েছে। এরপর ঘটনাটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে লকডাউনের সুযোগে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কিছু জায়গা দখল করে দ্বিতল ভবন নির্মাণ শুরু করেন স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা শামীম আল নঈম। এ ঘটনায় সহকারী কমিশনার ভূমি কাজ বন্ধ করে দিলে ওই ছাত্রলীগ নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভূমির সহকারী কর্মকর্তা আজিজুল হক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই ভূমি অফিসটি হচ্ছে উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে। মোট চার শতক জমির ওপর ভূমি অফিসটি। ভূমি অফিস ঘেঁষে ২০১৮ সালে দুই শতক জমি ক্রয় করেন এলাকার মো. মকবুল হোসেনের ছেলে শামীম আল নঈম। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
জানা যায়, নঈম বেশ কিছুদিন ধরে নিজের জায়গায় দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে লকডাউনের সুযোগে তিনি নিজের জায়গার পাশেই ভূমি অফিসের বেশ কিছু জায়গা দখলে নিয়ে ভবনের সঙ্গে বর্ধিত করে ফেলেন। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে বাধা দিলেও ওই নেতা কর্ণপাত না করে কাজ চালিয়ে যান।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে। তারা বলেন, ছাত্রলীগ সংগঠনটির ছাত্রদের ধীরে ধীরে উগ্র এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রুপদানের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক মদদ ও উস্কানি। এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ