মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে ভিডিও শেয়ার করার অভিযোগে মানিকগঞ্জে এক যুবকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে শিবালয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইমরান চৌধুরী বাদী হয়ে শিবালয় থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অভিযুক্ত শেখ মানিক মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার দাসকান্দি বাসিন্দা।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় শেখ মানিকের নামে থানায় মামলা রুজু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, গত ৪ এপ্রিল শেখ মানিক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কুরুচিপূর্ণ ভিডিও ‘বুবুজান বুবুজান আপনি ভারত চলে যান’ শেয়ার করেন। ভিডিওটি শেয়ারের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মান চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়াতে এলাকায় তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অংশ হিসেবে সব সময়ই তার ফেসবুক আইডিতে বাংলাদেশের সরকার প্রধানসহ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে আসছে।
মামলার বাদী মো. ইমরান চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের একজন আদর্শিক কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। এজন্যই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিকারী সুনামগঞ্জের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ যাত্রাবাড়ী থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত যুবকের নাম আবিরুল ইসলাম আলম (২৪)। সে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট (বাদড়গড়) গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুর রশিদ তালুকদারের ছেলে।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ই এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রেপ্তারকৃত আবিরুল ইসলাম আলমের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। এ পোস্টটি সুনামগঞ্জের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে এবং অভিযুক্ত আলমের বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনীর সিভিল পোস্টের একটি স্কুলে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন।
সেখানে খোঁজ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জানতে পারে তিনি গত এক বছর আগে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ঢাকার সাভারের গ্লোবাল ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছেন। পরে বুধবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার জানান, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় তার বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় মামলার প্রস্ততি চলছিল। পরে সিডিএস সূত্রে জানতে পারি ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাহিরপুর থানাকে অবগত করেছে। তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
“সবার মধ্যে একটা ভীতি যে এইটা বললে কী হবে! এবং আমরাও বলি যে এতকিছু বলো না তোমার বিপদ হবে। এটা স্বাধীন দেশে আমরা কেন করবো? এটা কিন্তু বেশ স্বার্থকভাবে সরকার করে ফেলেছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ একটা ভীতি প্রদর্শন, ভীতি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ