একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে অবৈধভাবে আটকিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে পল্লবী থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় তার আরও তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আঁখি নামে তার আরেক সহযোগী পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার বাকি তিন জন হলেন- জয়নাল, মেহেদি ও আদনান। রোববার (১১ এপ্রিল) সকালে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পল্লবী থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ডোপ টেস্ট হয় পল্লবী থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামানের। ডোপ টেস্ট পজিটিভ হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি হারিয়ে তিনি নানা বেআইনি কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
গত ৮ এপ্রিল আসাদুজ্জামানসহ তার চার সহযোগী পল্লবীর ১১ নম্বর পলাশনগরের একটি বাসায় ওই বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে অবৈধভাবে আটকিয়ে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। পরে তিনি বাদী হয়ে গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলার প্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামানসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে প্রায় সময় মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করতে যেতে হয় ভুক্তভোগী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় পল্লবীর ১১ নম্বর পলাশনগর মালিক সমিতির মোড়ে সাব্বির হোসেন নামে এক ঋণখেলাপি সম্পর্কে জানতে গোপন তদন্তে বের হন তিনি।
পলাশনগরের একটি বাড়িতে গিয়ে সাব্বির হোসেন সম্পর্কে জানতে চাইলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে একটি কক্ষে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পরে আঁখি ওরফে সাথী নামে একটি মেয়ে ও অজ্ঞাত ছয়জন লোক ওই কক্ষে প্রবেশ করে দরজা আটকিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন।
এরপর তার কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। সঙ্গে থাকা ডেবিট, ক্রেডিট ও মাস্টার কার্ডগুলো নিয়ে যায়। তারা কার্ডগুলোর পিন নম্বরও নিয়ে নেয়। ব্যাংকের ওই ভাইস প্রেসিডেন্ট জীবন ভিক্ষা চাইলে তার পরিহিত শার্ট, প্যান্ট খুলে গামছা পরিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আসামি আঁখি ওরফে সাথীকে পাশে বসিয়ে আপত্তিকর ছবি ও মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডগুলো নিয়ে অজ্ঞাত চারজন বাইরে চলে যায়।
তাকে পাহারা দেয়ার জন্য আঁখিসহ দুইজনকে রেখে যায়। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে নগদ ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন ও মার্কেটে কেনাকাটা করে। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় অজ্ঞাত চারজন বাইরে থেকে এসে তাকে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও ভয় দেখিয়ে বলে, এ ঘটনা কাউকে জানালে মোবাইলে ধারণকৃত আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারিকুর রহমান শুভ বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে আসাদুজ্জামানসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর পলাতক আরেক আসামি আঁখিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ব্যাংকের কর্মকর্তার অভিযোগটি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, আইনের রক্ষক হয়ে যখন একজন পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, একজন অপরাধীর চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া উচিত। অথচ আমাদের দেশে সম্পূর্ণই এর বিপরীত। অপরাধ জগতের ডন হয়েও শাস্তি পায় সাময়িক বরখাস্ত ও পুলিশ লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের থাকার কথা থাকলেও পুলিশ নিজেই এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের এহেন ভক্ষকের ভূমিকায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে আছে দেশবাসী। এ থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশ বাহিনীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের কড়া নজরদারিও দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪২৫
আপনার মতামত জানানঃ