চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে ৪০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন ৫৯৮ জন। নিহতের মধ্যে ৭৮ জন নারী ও ৬৩ জন শিশু রয়েছে।
এই সময়ে ২টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছে। ১৫টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংগঠনটি সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩৮টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হন। যা মোট নিহতের ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় মোট নিহতের যানবাহন ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরবাইকে চালক ও আরোহী ১৪৭ জন; যা দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বাস যাত্রী ৩০ জন; যা দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি যাত্রী ৫১ জন; যা দুর্ঘটনার ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ৫০ জন; যা দুর্ঘটনার ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-মিশুক) ৮১ জন; যা দুর্ঘটনার ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা ও বাইসাইকেল আরোহী ১৮ জন; যা দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৭২টি বা ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১১৬টি বা ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ৭৩টি বা ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে, ৩৬টি বা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ১২টি বা ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরণে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর ৯১টি বা ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪২টি বা ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৩৪টি বা ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ২৯টি বা ৭ দশমিক ৯ শতাংশ যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৩টি বা ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৪০৬টি দুর্ঘটনায় ৫১৭ জন নিহত হয়েছিল।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো বা দুর্ঘটনা হ্রাসে প্রথম দায়িত্ব পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএর। তারপর পুলিশ বিভাগের। কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্য কোথাও বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট বা ইন্সপেক্টর নেই।
বিআরটিএ বলছে, জনবল সংকটের মুখে সড়ককে নিরাপদ করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সিসি ক্যামেরা স্থাপন। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করার পাশাপাশি মালিক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের সচেতনতাই পারে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ নব নিযুক্ত সচিব মো. সরওয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সংস্থার পক্ষ থেকে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক দেখভালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। দুর্ঘটনা হ্রাস ও রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে সড়ক মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ক্যামেরা বসানো হলে ঘরে বসেই সড়কের অনেক কিছুই দেখভাল করা সম্ভব।
মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, উন্নত অনেক শহরে দেখেছি রাস্তায় ট্রাফিক নেই। কোনো চালক বেপরোয়া চালানো বা দুর্ঘটনা ঘটালে এমনকি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে কন্ট্রোল রুম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। চালকদের দোষ থাকলে লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা, লাইসেন্স স্থগিত-বাতিলসহ নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমাদেরও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। তাছাড়া হাইওয়েতে ডাকাতি, গাড়ি চুরিরোধসহ রাস্তায় যেকোনো অপরাধ দমনে সিসি ক্যামেরা অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে’।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের কোনো জেলা-উপজেলায় বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার জন্যও অনেক জেলা কার্যালয়ে কোনো গাড়ি নেই। তাই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বা তদারকি একেবারেই সম্ভব হয় না। জনবলের অভাবে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব দুর্ঘটনার ডাটাবেজ পর্যন্ত নেই। পুলিশের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করতে হয়! এভাবে একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। অতি দ্রুত বিআরটিএতে জবল বাড়ানো ও দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। দক্ষ জনবল বাড়ানো সম্ভব হলে অনেক বিষয়ে উন্নতি হবে। যার সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাব সড়কে শৃঙ্খলা বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা হ্রাসে’।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ