লকডাউনের মধ্যেই চিরচেনা যানজটের নগরীতে ফিরেছে শহর। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন নগরীর সড়কগুলোতে যানজট দেখা গেছে। সোমবারের (৫ এপ্রিল) তুলনায় আজ মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) যানবাহনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। শুধু গণপরিবহন ছাড়া সবই চলতে দেখা গেছে। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়ক মোড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিন সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেখা গেছে। বেশিরভাগ সড়কে তিন রাস্তা ও চৌরাস্তায় জ্যাম দেখা গেছে। পাশাপাশি ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতেও জ্যাম দেখা গেছে।
সকাল ৯টায় রাজারবাগ মোড়ে দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের মতো যানজট। প্রতিটি সিগন্যালে ৮-১০ মিনিটের মতো করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গতকাল এই সিগন্যালে কোনও ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিত ছিলেন না।
কাকরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করছেন। একই চিত্র দেখা গেছে ফকিরাপুল, কামরাইল, পল্টন, দৈনিক বাংলা, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কাওরান বাজার, পান্থপথসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে।
মোটরসাইকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও বাহনটিতে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে পাঠাওয়ের চালক নাফিজুল হক বলেন, ‘সব কিছু চলছে। দোকান পাট খোলা। তাহলে আমরা যাত্রী পরিবহন কলে সমস্যা কোথায়? সরকার যদি সব কিছুতে কড়াকড়ি করে তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। একটা চলবে আরেকটা চলবে না তা তো হতে পারে না।’
রিকশাচালক সমির আলী বলেন, ‘এটা কিসের লকডাউন? লকডাউনে কী যানজট থাকে? শুধু গরিব মানুষের বাহন গণপরিবহন ছাড়া সব কিছু চলছে। যে অবস্থা মনে হচ্ছে কাল থেকে বাসও নেমে যাবে।’
পল্টনের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন আসগর আলী। তিনি বলেন, ‘গতকাল অনেক সময় অপেক্ষা করে একটি রিকশা পেয়েছি। আজ দেখছি যাত্রীর জন্য রিকশা ওয়ালারা অপেক্ষা করছে। সিগন্যালে সিগন্যালে যানজট। তাহলে লকডাউন হলো কীভাবে?’
ফকিরাপুলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আরমান বলেন, গতকালের চেয়ে আজ যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সড়ক মোড়গুলোতে সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এর আগে গতকাল করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে দ্বিতীয় দফা লকডাউন শুরু হলেও ঢাকায় এর ছিটেফোঁটারও দেখা যায়নি। শুধু মাত্র গণপরিবহন চলাচল ছাড়া রাজধানীর সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো। কোথাও কোথাও যানজটও দেখা গেছে। বিশেষ করে রাজধানীর অলিগলিগুলো যেন আরও জমজমাট।
সেখানে ইচ্ছেমতো লোকজন ঘোরাফেরা করছে। নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও সব ধরনের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। মাস্ক ছাড়াই অবাধে চলছে বেশিরভাগ লোক। কোথাও কোথাও উঠতি বয়সী তরুণরা আড্ডা দিচ্ছে।
অন্যদিকে লকডাউন কার্যকরে প্রশাসনের কোনো বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়েনি, তেমনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও বালাই ছিল না কোথাও। রাজধানীতে চলছে না গণপরিবহন। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খোলা থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দখল নিয়েছে রাজধানীর সড়কগুলো।
২০১৯ সালে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস সময়ে ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে। এতে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের ১০ দিন পর করোনায় প্রথম কারও মৃত্যু হয়।
গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সোমবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৩১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৯ জন।
জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইন লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় চলতি বছরের ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনের আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ